অরুন্ধতী মুনমুন
১৮ নভেম্বর, ২০২৫, 4:35 PM
আজকের বাবা-মায়েরা যে বাস্তবতার মুখোমুখি, তা আগের প্রজন্মের থেকে অনেক আলাদা। ফলে সন্তান লালনপালন এখন শুধু দায়িত্ব নয়, বরং এক মানসিক ও শারীরিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। আগের মতো দাদা-দাদির সহায়তা বা যৌথ পরিবার অনেক কম। বাবা-মা দুজনেই কর্মজীবী, সময়ের অভাব, ডিজিটাল বিভ্রান্তি আর বাচ্চাদের মানসিক বিকাশের চাপ– সব মিলিয়ে সন্তান পালন এখন এক ধরনের পূর্ণকালীন দায়িত্ব ও মানসিক চ্যালেঞ্জ।
মনোবিজ্ঞানী ও শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের আচরণ, ঘুম ও মানসিক বিকাশে বাবা-মায়ের সচেতন ভূমিকা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনন্দিন জীবনের কয়েকটি ছোট পরিবর্তনই শিশু পালনকে সহজ, ইতিবাচক ও সুন্দর করে তুলতে পারে।
এখানে বাবা-মায়ের জন্য এমন ৫টি বাস্তবমুখী পরামর্শ রয়েছে যা তাদের শিশুদের ভালোভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত রুটিনে ফিরুন
শিশুরা রুটিন ভালোবাসে। তাদের শরীর ও মন দুই-ই তখন স্থিতিশীল থাকে, যখন প্রতিদিনের ঘুম, খাওয়া ও খেলার সময় নির্দিষ্ট থাকে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, শিশু যদি জানে পরের কাজ কী হতে যাচ্ছে, তবে তার উদ্বেগ ও কান্না অনেকটাই কমে যায়।
করণীয়
• ঘুম, খাওয়া, ও পড়াশোনার সময় প্রতিদিন একই রাখুন।
• ঘুমের আগে একটি রুটিন বজায় রাখুন-- যেমন গল্প শোনা, দুধ খাওয়া, তারপর ঘুম।
• ছুটির দিনেও এই রুটিন বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
`না’ না বলে বিকল্প দিন
বাংলাদেশে এখন অনেক বাবা-মা অভিযোগ করেন, শিশুদের কথা শোনানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাচ্চাদের সরাসরি `না’ বলা নয়, বরং বিকল্প দেওয়া বেশি কার্যকর। যেমন: `ওটা ধরো না’ বলার বদলে বলুন, `এইটা ধরো, এটা তোমার জন্য নিরাপদ।‘
এভাবে শিশুরা শিখে কীভাবে সঠিক আচরণ বেছে নিতে হয়, আবার সম্পর্কও নষ্ট হয় না।
সময় দিন, কিন্তু মনোযোগসহ
আজকের ডিজিটাল যুগে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো– বাবা-মায়ের সময় আছে, কিন্তু মনোযোগ নেই। অনেক সময় দেখা যায়, শিশু কথা বলছে আর মা-বাবা ফোনে ব্যস্ত। এতে শিশুর মনে একধরনের অবহেলার অনুভূতি জন্মায়।
করণীয়
• প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ফোন ছাড়াই শিশুর সঙ্গে সময় কাটান।
• গল্প বলা, গান গাওয়া, আঁকা বা একসঙ্গে খেলা করতে পারেন।
• ছোট ছোট কাজগুলোতে ওদের অংশ নিতে দিন– এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
শুনুন, তারপর বলুন
শিশুরা রাগ বা কান্নার মাধ্যমে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে। এই সময় বাবা-মা যদি আগে শোনেন, তারপর বোঝানোর চেষ্টা করেন, তবে শিশু দ্রুত শান্ত হয়ে যায়। মনোবিদরা বলেন, শিশুর আবেগ বুঝে প্রতিক্রিয়া জানানোই ভালো প্যারেন্টিং-এর মূল চাবিকাঠি। এভাবে শিশু শিখে যায়, রাগ বা কষ্ট হলে কিভাবে কথা বলে তা প্রকাশ করতে হয়।
নিজের যত্ন নিন
সন্তান পালনের ব্যস্ততায় অনেক বাবা-মা নিজেদের ভুলে যান। কিন্তু একজন শান্ত, সুস্থ ও প্রশান্ত অভিভাবকই একটি সুখী শিশুর ভিত্তি তৈরি করে।
করণীয়
• পর্যাপ্ত ঘুম ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করুন।
• মানসিক চাপ বেড়ে গেলে কাউকে বলুন, সাহায্য চাইতে দ্বিধা করবেন না।
• নিজের জন্য কিছু সময় রাখুন- যেমন বই পড়া, হাঁটা বা প্রিয় গান শোনা।
শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘শিশুরা যা শোনে তার চেয়ে বেশি শেখে যা দেখে।’ তাই বাবা-মায়ের শান্ত, ইতিবাচক ও ধৈর্যশীল আচরণই সন্তানের শিক্ষার সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম। দৈনন্দিন ব্যস্ততার মাঝেও সামান্য সময় ও মনোযোগ দিলেই বাবা-মা ও সন্তানের সম্পর্ক হতে পারে আরও গভীর ও সুন্দর। একটু ভালোবাসা, কিছু ধৈর্য আর সঠিক দিকনির্দেশনা- এই তিনেই গড়ে ওঠে সুখী পরিবার ও সচেতন প্রজন্ম।
লেখক: শিশু বিকাশ বিষয়ক গবেষক, শিশুবিকাশ ডটকম
অরুন্ধতী মুনমুন
১৮ নভেম্বর, ২০২৫, 4:35 PM
আজকের বাবা-মায়েরা যে বাস্তবতার মুখোমুখি, তা আগের প্রজন্মের থেকে অনেক আলাদা। ফলে সন্তান লালনপালন এখন শুধু দায়িত্ব নয়, বরং এক মানসিক ও শারীরিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। আগের মতো দাদা-দাদির সহায়তা বা যৌথ পরিবার অনেক কম। বাবা-মা দুজনেই কর্মজীবী, সময়ের অভাব, ডিজিটাল বিভ্রান্তি আর বাচ্চাদের মানসিক বিকাশের চাপ– সব মিলিয়ে সন্তান পালন এখন এক ধরনের পূর্ণকালীন দায়িত্ব ও মানসিক চ্যালেঞ্জ।
মনোবিজ্ঞানী ও শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের আচরণ, ঘুম ও মানসিক বিকাশে বাবা-মায়ের সচেতন ভূমিকা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনন্দিন জীবনের কয়েকটি ছোট পরিবর্তনই শিশু পালনকে সহজ, ইতিবাচক ও সুন্দর করে তুলতে পারে।
এখানে বাবা-মায়ের জন্য এমন ৫টি বাস্তবমুখী পরামর্শ রয়েছে যা তাদের শিশুদের ভালোভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত রুটিনে ফিরুন
শিশুরা রুটিন ভালোবাসে। তাদের শরীর ও মন দুই-ই তখন স্থিতিশীল থাকে, যখন প্রতিদিনের ঘুম, খাওয়া ও খেলার সময় নির্দিষ্ট থাকে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, শিশু যদি জানে পরের কাজ কী হতে যাচ্ছে, তবে তার উদ্বেগ ও কান্না অনেকটাই কমে যায়।
করণীয়
• ঘুম, খাওয়া, ও পড়াশোনার সময় প্রতিদিন একই রাখুন।
• ঘুমের আগে একটি রুটিন বজায় রাখুন-- যেমন গল্প শোনা, দুধ খাওয়া, তারপর ঘুম।
• ছুটির দিনেও এই রুটিন বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
`না’ না বলে বিকল্প দিন
বাংলাদেশে এখন অনেক বাবা-মা অভিযোগ করেন, শিশুদের কথা শোনানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাচ্চাদের সরাসরি `না’ বলা নয়, বরং বিকল্প দেওয়া বেশি কার্যকর। যেমন: `ওটা ধরো না’ বলার বদলে বলুন, `এইটা ধরো, এটা তোমার জন্য নিরাপদ।‘
এভাবে শিশুরা শিখে কীভাবে সঠিক আচরণ বেছে নিতে হয়, আবার সম্পর্কও নষ্ট হয় না।
সময় দিন, কিন্তু মনোযোগসহ
আজকের ডিজিটাল যুগে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো– বাবা-মায়ের সময় আছে, কিন্তু মনোযোগ নেই। অনেক সময় দেখা যায়, শিশু কথা বলছে আর মা-বাবা ফোনে ব্যস্ত। এতে শিশুর মনে একধরনের অবহেলার অনুভূতি জন্মায়।
করণীয়
• প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ফোন ছাড়াই শিশুর সঙ্গে সময় কাটান।
• গল্প বলা, গান গাওয়া, আঁকা বা একসঙ্গে খেলা করতে পারেন।
• ছোট ছোট কাজগুলোতে ওদের অংশ নিতে দিন– এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
শুনুন, তারপর বলুন
শিশুরা রাগ বা কান্নার মাধ্যমে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে। এই সময় বাবা-মা যদি আগে শোনেন, তারপর বোঝানোর চেষ্টা করেন, তবে শিশু দ্রুত শান্ত হয়ে যায়। মনোবিদরা বলেন, শিশুর আবেগ বুঝে প্রতিক্রিয়া জানানোই ভালো প্যারেন্টিং-এর মূল চাবিকাঠি। এভাবে শিশু শিখে যায়, রাগ বা কষ্ট হলে কিভাবে কথা বলে তা প্রকাশ করতে হয়।
নিজের যত্ন নিন
সন্তান পালনের ব্যস্ততায় অনেক বাবা-মা নিজেদের ভুলে যান। কিন্তু একজন শান্ত, সুস্থ ও প্রশান্ত অভিভাবকই একটি সুখী শিশুর ভিত্তি তৈরি করে।
করণীয়
• পর্যাপ্ত ঘুম ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করুন।
• মানসিক চাপ বেড়ে গেলে কাউকে বলুন, সাহায্য চাইতে দ্বিধা করবেন না।
• নিজের জন্য কিছু সময় রাখুন- যেমন বই পড়া, হাঁটা বা প্রিয় গান শোনা।
শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘শিশুরা যা শোনে তার চেয়ে বেশি শেখে যা দেখে।’ তাই বাবা-মায়ের শান্ত, ইতিবাচক ও ধৈর্যশীল আচরণই সন্তানের শিক্ষার সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম। দৈনন্দিন ব্যস্ততার মাঝেও সামান্য সময় ও মনোযোগ দিলেই বাবা-মা ও সন্তানের সম্পর্ক হতে পারে আরও গভীর ও সুন্দর। একটু ভালোবাসা, কিছু ধৈর্য আর সঠিক দিকনির্দেশনা- এই তিনেই গড়ে ওঠে সুখী পরিবার ও সচেতন প্রজন্ম।
লেখক: শিশু বিকাশ বিষয়ক গবেষক, শিশুবিকাশ ডটকম