নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩ নভেম্বর, ২০২৫, 5:28 PM
আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, টাস্কফোর্স কমিটির নিষ্ক্রিয়তা এবং তামাক কোম্পানিগুলোর নতুন কৌশলের কারণে খুলনায় তামাকের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। একসময় তামাক নিয়ন্ত্রণে শ্রেষ্ঠ জেলা হিসেবে পুরস্কৃত হলেও, এখন খুলনা কার্যত তামাকের জন্য একটি 'নিরাপদ স্থানে' পরিণত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়ছে নারী, শিশু, তরুণ ও শিক্ষার্থীরা, যাদের লক্ষ্য করে কোম্পানিগুলো নানা চটকদার বিজ্ঞাপন ও উপহার সামগ্রী দিচ্ছে।কোম্পানিগুলোর নতুন কৌশল: বিজ্ঞাপন ও উপহারের দাপটসরেজমিনে দেখা গেছে, তামাক কোম্পানিগুলো প্রকাশ্যে তাদের প্রচারণা চালাচ্ছে, যা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ৫ ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
শিক্ষার্থী টার্গেট: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে বা শিক্ষার্থীরা বেশি যাতায়াত করে এমন জায়গায় গোপনে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।দোকান সজ্জিতকরণ: রূপসা ঘাট, শিববাড়ী মোড়, নিউমার্কেট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় গলি রোডসহ মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ১১টি মোড়ে তামাক কোম্পানিগুলোর অর্থায়ন ও পরিকল্পনায় দোকানগুলো তাদের পণ্যের রঙের থিমে (যেমন হলুদ ও নীল, লাল ও সাদা) সজ্জিত করা হয়েছে।উপহার সামগ্রী: তরুণদের আকৃষ্ট করতে তামাক কোম্পানিগুলো ক্যাপ, টি-শার্ট, জ্যাকেট, ওয়ালেট, ছাতা, পানির বোতল, মগ, কলমসহ বিভিন্ন ব্যবহার্য পণ্য উপহার হিসেবে দিচ্ছে।
নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করলে দোকানিদের ঘড়ি, মোবাইল ফোন, ব্লেন্ডার, ডিসপ্লে রেক বা সাইনবোর্ডের মতো মূল্যবান উপহার দেওয়া হচ্ছে।আইন প্রয়োগে দুর্বলতা: কমছে অভিযানখুলনা জেলায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের দায়ে গত প্রায় তিন বছরে (জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ১৬ অক্টোবর ২০২৫) ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, যা আইনের কঠোর প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে:বছরভ্রাম্যমাণ আদালতমামলার সংখ্যাজরিমানা (মোট)২০২৩৩৪টি৩৮টি৩১,১০০ টাকা (৫ জন)২০২৪১০টি১৬টি৬২,৯০০ টাকা (১৬ জন)২০২৫ (অক্টোবর পর্যন্ত)৬টি৫টি১,৭৩,৪৬০ টাকা (৪০ জন)মোট (৩৪ মাসে)৫০টি৫৯টি২,৬৭,৪৬০ টাকাচলতি বছরে অভিযান সংখ্যা কমেছে এবং বেশিরভাগ জরিমানার অর্থদণ্ড তুলনামূলকভাবে কম।
অন্যদিকে, ২০২২ সালে মাত্র চারটি অভিযানে দুইজনকে কারাদণ্ডসহ এক লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।টাস্কফোর্স নিষ্ক্রিয়তা ও অব্যবস্থাপনাখুলনা জেলার সচেতন নাগরিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেছেন, জেলায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে নিয়োজিত টাস্কফোর্স কমিটি সক্রিয় নয়।নামমাত্র সভা: কমিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টাস্কফোর্স সভাগুলো আলাদাভাবে না হয়ে অন্যান্য সভার সঙ্গে সংক্ষিপ্তভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কেবল স্বাক্ষর নিয়ে সভা শেষ করা হয়। পূর্ববর্তী সভার সিদ্ধান্ত ফলোআপ করা হয় না।আইন লঙ্ঘনে শিথিলতা: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির দোকান না থাকার বিধানসহ আইনের অন্যান্য ধারাগুলো সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টির বাইরে থাকছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সচেতন মহলের দাবিখুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম এবং সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ উভয়েই আইনের কঠোর প্রয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন।কারাদণ্ড দেওয়া জরুরি: উপাচার্য এবং জেলার উন্নয়নকর্মী কাজী মো. হাসিবুল হক উভয়েই মনে করেন, শুধু জরিমানা নয়, আইন মানতে বাধ্য করার জন্য জরিমানার পাশাপাশি ন্যূনতম একদিনের কারাদণ্ড দেওয়া প্রয়োজন।সচেতনতা ও সক্রিয় টাস্কফোর্স: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতাকে আন্দোলনে রূপ দিতে হবে এবং টাস্কফোর্স কমিটির নিয়মিত সভা ও প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন জরুরি।এদিকে, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে কঠোর শাস্তির আওতায় এনে বিদ্যমান আইনটিকে আরও শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন।খুলনার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান অবশ্য বলেছেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে নিয়মিত অভিযান চালানো হয় এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। তিনি ১৬ অক্টোবর সাত রাস্তামোড়ে জাপানি তামাক কোম্পানিকে জরিমানার তথ্যও নিশ্চিত করেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩ নভেম্বর, ২০২৫, 5:28 PM
আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, টাস্কফোর্স কমিটির নিষ্ক্রিয়তা এবং তামাক কোম্পানিগুলোর নতুন কৌশলের কারণে খুলনায় তামাকের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। একসময় তামাক নিয়ন্ত্রণে শ্রেষ্ঠ জেলা হিসেবে পুরস্কৃত হলেও, এখন খুলনা কার্যত তামাকের জন্য একটি 'নিরাপদ স্থানে' পরিণত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়ছে নারী, শিশু, তরুণ ও শিক্ষার্থীরা, যাদের লক্ষ্য করে কোম্পানিগুলো নানা চটকদার বিজ্ঞাপন ও উপহার সামগ্রী দিচ্ছে।কোম্পানিগুলোর নতুন কৌশল: বিজ্ঞাপন ও উপহারের দাপটসরেজমিনে দেখা গেছে, তামাক কোম্পানিগুলো প্রকাশ্যে তাদের প্রচারণা চালাচ্ছে, যা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ৫ ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
শিক্ষার্থী টার্গেট: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে বা শিক্ষার্থীরা বেশি যাতায়াত করে এমন জায়গায় গোপনে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।দোকান সজ্জিতকরণ: রূপসা ঘাট, শিববাড়ী মোড়, নিউমার্কেট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় গলি রোডসহ মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ১১টি মোড়ে তামাক কোম্পানিগুলোর অর্থায়ন ও পরিকল্পনায় দোকানগুলো তাদের পণ্যের রঙের থিমে (যেমন হলুদ ও নীল, লাল ও সাদা) সজ্জিত করা হয়েছে।উপহার সামগ্রী: তরুণদের আকৃষ্ট করতে তামাক কোম্পানিগুলো ক্যাপ, টি-শার্ট, জ্যাকেট, ওয়ালেট, ছাতা, পানির বোতল, মগ, কলমসহ বিভিন্ন ব্যবহার্য পণ্য উপহার হিসেবে দিচ্ছে।
নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করলে দোকানিদের ঘড়ি, মোবাইল ফোন, ব্লেন্ডার, ডিসপ্লে রেক বা সাইনবোর্ডের মতো মূল্যবান উপহার দেওয়া হচ্ছে।আইন প্রয়োগে দুর্বলতা: কমছে অভিযানখুলনা জেলায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের দায়ে গত প্রায় তিন বছরে (জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ১৬ অক্টোবর ২০২৫) ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, যা আইনের কঠোর প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে:বছরভ্রাম্যমাণ আদালতমামলার সংখ্যাজরিমানা (মোট)২০২৩৩৪টি৩৮টি৩১,১০০ টাকা (৫ জন)২০২৪১০টি১৬টি৬২,৯০০ টাকা (১৬ জন)২০২৫ (অক্টোবর পর্যন্ত)৬টি৫টি১,৭৩,৪৬০ টাকা (৪০ জন)মোট (৩৪ মাসে)৫০টি৫৯টি২,৬৭,৪৬০ টাকাচলতি বছরে অভিযান সংখ্যা কমেছে এবং বেশিরভাগ জরিমানার অর্থদণ্ড তুলনামূলকভাবে কম।
অন্যদিকে, ২০২২ সালে মাত্র চারটি অভিযানে দুইজনকে কারাদণ্ডসহ এক লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।টাস্কফোর্স নিষ্ক্রিয়তা ও অব্যবস্থাপনাখুলনা জেলার সচেতন নাগরিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেছেন, জেলায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে নিয়োজিত টাস্কফোর্স কমিটি সক্রিয় নয়।নামমাত্র সভা: কমিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টাস্কফোর্স সভাগুলো আলাদাভাবে না হয়ে অন্যান্য সভার সঙ্গে সংক্ষিপ্তভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কেবল স্বাক্ষর নিয়ে সভা শেষ করা হয়। পূর্ববর্তী সভার সিদ্ধান্ত ফলোআপ করা হয় না।আইন লঙ্ঘনে শিথিলতা: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির দোকান না থাকার বিধানসহ আইনের অন্যান্য ধারাগুলো সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টির বাইরে থাকছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সচেতন মহলের দাবিখুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম এবং সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ উভয়েই আইনের কঠোর প্রয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন।কারাদণ্ড দেওয়া জরুরি: উপাচার্য এবং জেলার উন্নয়নকর্মী কাজী মো. হাসিবুল হক উভয়েই মনে করেন, শুধু জরিমানা নয়, আইন মানতে বাধ্য করার জন্য জরিমানার পাশাপাশি ন্যূনতম একদিনের কারাদণ্ড দেওয়া প্রয়োজন।সচেতনতা ও সক্রিয় টাস্কফোর্স: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতাকে আন্দোলনে রূপ দিতে হবে এবং টাস্কফোর্স কমিটির নিয়মিত সভা ও প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন জরুরি।এদিকে, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে কঠোর শাস্তির আওতায় এনে বিদ্যমান আইনটিকে আরও শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন।খুলনার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান অবশ্য বলেছেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে নিয়মিত অভিযান চালানো হয় এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। তিনি ১৬ অক্টোবর সাত রাস্তামোড়ে জাপানি তামাক কোম্পানিকে জরিমানার তথ্যও নিশ্চিত করেন।