ড. রাধেশ্যাম সরকার
০৯ নভেম্বর, ২০২৫, 4:47 PM
সময়ের সঙ্গে মানুষ বদলায়, বদলায় তার সম্পর্কের ব্যাকরণও। কর্মজীবনের অবসান শুধু জীবনের একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি নয়, বরং এটি একটি নতুন যুগের সূচনা। এই সময়টিতে জীবন হয়ে পড়ে ধীর, নিঃশব্দ ও ভাবনায় পূর্ণ। অবসরের পর দাম্পত্য সম্পর্কের রঙও বদলায়। কারো কাছে তা হয় নরম, কোমল ও স্নেহময়, আবার কারো কাছে হয় ক্লান্ত, একঘেয়ে কিংবা বিরক্তিকর। এই পরিবর্তন শুধু পারস্পরিক যোগাযোগের উপর নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের প্রতিফলন হিসেবেও দেখা যায়। কর্মজীবনের ব্যস্ত সময়ে স্বামী-স্ত্রীর দৈনন্দিন জীবন চলে এক রকম গতিতে। দিনের বড় একটা সময় কেটে যায় অফিস, ব্যবসা বা পারিবারিক দায়িত্বের টানাপোড়েনে। সময়ের অভাবে দাম্পত্য সম্পর্ক অনেক সময়ই সীমিত থাকে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা ও পারস্পরিক দায়িত্ব পালনের মধ্যে। অনেক দম্পতির মধ্যেই দেখা যায়, পরস্পরের সঙ্গে গভীর আবেগী যোগাযোগ বা ‘সময় কাটানো’ বলেই কিছু যেন অনুপস্থিত থাকে।স্বমী স্ত্রী উভয় যদি কর্মজীবী হন তাহলে দাম্পত্যের সম্পর্ক আরো সীমিত হয়ে পরে কিন্তু অবসরের পর সেই চিত্র বদলায়। দিনের সবটুকু সময়ই এখন নিজেদের। কোনো অফিস নেই, নেই বাইরের তাড়া। ফলে যেসব অভ্যাস বা আচরণ আগে চোখে পড়তো না, সেগুলো হঠাৎ করে স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়। একে অপরের স্বভাব, পছন্দ-অপছন্দ, দৈনন্দিন কাজের ধারা সবকিছুই যেন নতুন করে নজরে আসে। অনেকে এই পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে নেন। দাম্পত্যে আসে ঘনিষ্ঠতা, নতুন করে সময় কাটানোর সুযোগ এবং আবেগের গভীরতা। অন্যদিকে, অনেকের কাছে এই হঠাৎ বেড়ে যাওয়া সময় হয়ে ওঠে অস্বস্তিকর। যেখানে নিজস্ব সময়ের অভাব বোধ করা শুরু হয়, আর তা থেকে তৈরি হয় মনোমালিন্য বা বিরক্তি। তবে এটাও সত্য, এই পরিবর্তন একটি প্রাকৃতিক এবং প্রয়োজনীয় ধাপ। জীবনের এই পর্যায়ে সম্পর্কের ছক বদলানো মানেই তা ভেঙে যাওয়া নয়, বরং তা নতুনভাবে গড়ে ওঠার সুযোগ। দাম্পত্য জীবনের এই রূপান্তর যদি বোঝাপড়া ও ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়, তবে তা হয়ে উঠতে পারে সম্পর্কের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও মধুর অধ্যায়। অনেক দম্পতির জন্য অবসর একটি আশীর্বাদ হয়ে আসে। এখন তারা একসঙ্গে সকালবেলার চা খেতে পারেন, বেড়াতে যেতে পারেন, বা পুরোনো দিনের গল্পে হারিয়ে যেতে পারেন। সন্তানরা বড় হয়ে গিয়েছে, অনেকেই আলাদা থাকে। ফলে জীবনের এই পর্যায়ে একে অপরের সঙ্গই হয়ে ওঠে প্রধান অবলম্বন। নতুন করে একে অপরকে আবিষ্কার করার সুযোগও আসে। অবসর মানেই শুধু অবকাশ নয়, অনেক সময় তা হয় নতুন এক মানসিক পরীক্ষার শুরু। দিনের পর দিন একসঙ্গে কাটানো যা একসময় স্বপ্ন মনে হতো, বাস্তবে এসে দেখা দেয় নানা টানাপোড়েন। আগে যে ব্যস্ততা দূরত্ব তৈরি করত, এখন সেই ঘনিষ্ঠতা থেকে জন্ম নেয় বিরক্তি, খুঁতখুঁতানি কিংবা নীরব অভিযোগ দীর্ঘদিন কর্মজীবনের বাইরে এসে কেউ কেউ নিজেদের অপ্রয়োজনীয় মনে করতে থাকেন, আত্মমর্যাদায় চিড় ধরে।
সেই অস্থিরতা অজান্তেই ছড়িয়ে পড়ে দাম্পত্যে। একে অপরের অভ্যাস কিংবা মতাদর্শে অসহিষ্ণুতা তৈরি হয়, আর ছোটখাটো বিষয় থেকেই জন্ম নেয় ভুল বোঝাবুঝি। অনেক দম্পতির মধ্যেই দেখা যায় একধরনের অস্বস্তি। দীর্ঘদিন একে অপরকে দেখে অভ্যস্ত হলেও, কাছাকাছি সময় কাটানোর অভ্যাস তৈরি না থাকলে একে অপরের ছোটখাটো আচরণও হয়ে ওঠে বিরক্তির কারণ। কারো টিভি দেখার অভ্যাস, কারো অতিরিক্ত নীরবতা, আবার কারো সব বিষয়ে মতামত দেওয়া এইসব ছোট ছোট বিষয়গুলো থেকেই জন্ম নেয় মানসিক দূরত্ব। তবু এই দ্বন্দ্বই বুঝিয়ে দেয় সম্পর্কের ভিত কতটা শক্ত, কতটা সহনশীল। যদি ভালোবাসার জায়গাটা অটুট থাকে, তবে এমন চ্যালেঞ্জও হয়ে উঠতে পারে নতুন করে কাছে আসার উপলক্ষ।
অবসরের পর সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে ওঠে অর্থ ও পরিচয়ের পরিবর্তন। নিয়মিত আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়, জীবন নির্ভর করে সীমিত পেনশন কিংবা সঞ্চয়ের উপর। প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশি খরচ করলেই মনে জন্ম নেয় অপরাধবোধ, আর সঙ্গীর চোখে খুঁতখুঁতানি। এই চাপ অনেক সময় সম্পর্কেও ছায়া ফেলে। একসময় কর্মক্ষেত্রে যে মানুষ ছিলেন সম্মানিত, পরামর্শদাতা, সিদ্ধান্ত-নির্মাতা অবসরের পর ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলেন সেই পরিচয়। বন্ধুদের সংখ্যা কমে আসে, ব্যস্ত সন্তানদের জীবনেও নিজের জায়গাটা হয়ে ওঠে অপ্রাসঙ্গিক। এই আর্থিক অনিশ্চয়তা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা একসঙ্গে মিলে দম্পতির মাঝে জন্ম দেয় একধরনের নিঃসঙ্গতা, শূন্যতা ও মানসিক ক্লান্তি। তবু এই বাস্তবতা মেনে নিয়েও জীবনকে সুন্দর করে তোলা সম্ভব যদি দু’জন মানুষ একে অপরকে একটু বেশি বোঝেন, একটু বেশি সময় দেন। দাম্পত্য জীবনে অবসরের পর যে জটিলতা তৈরি হয়, তার কোনো ম্যাজিক সমাধান নেই। কিন্তু ভালোবাসা যদি থাকে, তাহলে প্রতিকূলতার মধ্যেও পথ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়। প্রথমেই প্রয়োজন খোলামেলা কথা বলা চুপ করে থাকলে ভুল বোঝাবুঝি জমে ওঠে, সম্পর্কে চির ধরে ঘন কুয়াশায়। এ সময়টিতে একে অপরের প্রতি সহনশীল হওয়া জরুরি। সব অভ্যাস বদলানো সম্ভব নয়, কিন্তু মানিয়ে নেওয়া যায়। প্রতিদিন কিছুটা সময় শুধু নিজেদের জন্য রাখা এক কাপ চা, একটা হাঁটার সময়, কিংবা পুরোনো অ্যালবামের পাতা উল্টে বসে থাকা এসব ছোট ছোট মুহূর্তই দিতে পারে সম্পর্ককে নতুন আশ্রয়।চাইলে দু’জনে মিলে কিছু নতুন কাজ শুরু করা যায় বাগান করা, বই পড়া, সমাজসেবায় যুক্ত হওয়া কিংবা পুরোনো কোনো শখকে আবার জীবন্ত করে তোলা।
এতে জীবনে আসে অর্থপূর্ণ ব্যস্ততা, সম্পর্ক পায় নতুন স্পন্দন। সবচেয়ে জরুরি, একে অপরকে বোঝার চেষ্টা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যদি কেউ কাউকে আবার নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারেন তবে সেই দাম্পত্যই হয়ে ওঠে জীবনের সবচেয়ে নির্ভরতার জায়গা। পরিশেষে বলবো, অবসরের পর দাম্পত্য সম্পর্ক এক নতুন রূপ নেয়। কখনো তা হয় রঙিন, কখনো বিবর্ণ, আবার কখনো তা রঙের বাইরেও একটি নির্জন অথচ গভীর অনুভবের ক্ষেত্র। জীবনসায়াহ্নে এই সম্পর্কের গভীরতা আসলে নির্ভর করে দু’জন মানুষের মানসিক পরিপক্বতা, আন্তরিকতা ও সহমর্মিতার উপর। এই রঙ বদল যদি বোঝাপড়ার আলোয় রাঙানো যায়, তবে জীবনের শেষ প্রান্তটুকুও হয়ে উঠতে পারে আনন্দময়, প্রশান্তিময় ও পরিপূর্ণ।
লেখক: কৃষিবিদ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান, ডিআরপি ফাউন্ডেশন।
ড. রাধেশ্যাম সরকার
০৯ নভেম্বর, ২০২৫, 4:47 PM
সময়ের সঙ্গে মানুষ বদলায়, বদলায় তার সম্পর্কের ব্যাকরণও। কর্মজীবনের অবসান শুধু জীবনের একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি নয়, বরং এটি একটি নতুন যুগের সূচনা। এই সময়টিতে জীবন হয়ে পড়ে ধীর, নিঃশব্দ ও ভাবনায় পূর্ণ। অবসরের পর দাম্পত্য সম্পর্কের রঙও বদলায়। কারো কাছে তা হয় নরম, কোমল ও স্নেহময়, আবার কারো কাছে হয় ক্লান্ত, একঘেয়ে কিংবা বিরক্তিকর। এই পরিবর্তন শুধু পারস্পরিক যোগাযোগের উপর নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের প্রতিফলন হিসেবেও দেখা যায়। কর্মজীবনের ব্যস্ত সময়ে স্বামী-স্ত্রীর দৈনন্দিন জীবন চলে এক রকম গতিতে। দিনের বড় একটা সময় কেটে যায় অফিস, ব্যবসা বা পারিবারিক দায়িত্বের টানাপোড়েনে। সময়ের অভাবে দাম্পত্য সম্পর্ক অনেক সময়ই সীমিত থাকে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা ও পারস্পরিক দায়িত্ব পালনের মধ্যে। অনেক দম্পতির মধ্যেই দেখা যায়, পরস্পরের সঙ্গে গভীর আবেগী যোগাযোগ বা ‘সময় কাটানো’ বলেই কিছু যেন অনুপস্থিত থাকে।স্বমী স্ত্রী উভয় যদি কর্মজীবী হন তাহলে দাম্পত্যের সম্পর্ক আরো সীমিত হয়ে পরে কিন্তু অবসরের পর সেই চিত্র বদলায়। দিনের সবটুকু সময়ই এখন নিজেদের। কোনো অফিস নেই, নেই বাইরের তাড়া। ফলে যেসব অভ্যাস বা আচরণ আগে চোখে পড়তো না, সেগুলো হঠাৎ করে স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়। একে অপরের স্বভাব, পছন্দ-অপছন্দ, দৈনন্দিন কাজের ধারা সবকিছুই যেন নতুন করে নজরে আসে। অনেকে এই পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে নেন। দাম্পত্যে আসে ঘনিষ্ঠতা, নতুন করে সময় কাটানোর সুযোগ এবং আবেগের গভীরতা। অন্যদিকে, অনেকের কাছে এই হঠাৎ বেড়ে যাওয়া সময় হয়ে ওঠে অস্বস্তিকর। যেখানে নিজস্ব সময়ের অভাব বোধ করা শুরু হয়, আর তা থেকে তৈরি হয় মনোমালিন্য বা বিরক্তি। তবে এটাও সত্য, এই পরিবর্তন একটি প্রাকৃতিক এবং প্রয়োজনীয় ধাপ। জীবনের এই পর্যায়ে সম্পর্কের ছক বদলানো মানেই তা ভেঙে যাওয়া নয়, বরং তা নতুনভাবে গড়ে ওঠার সুযোগ। দাম্পত্য জীবনের এই রূপান্তর যদি বোঝাপড়া ও ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়, তবে তা হয়ে উঠতে পারে সম্পর্কের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও মধুর অধ্যায়। অনেক দম্পতির জন্য অবসর একটি আশীর্বাদ হয়ে আসে। এখন তারা একসঙ্গে সকালবেলার চা খেতে পারেন, বেড়াতে যেতে পারেন, বা পুরোনো দিনের গল্পে হারিয়ে যেতে পারেন। সন্তানরা বড় হয়ে গিয়েছে, অনেকেই আলাদা থাকে। ফলে জীবনের এই পর্যায়ে একে অপরের সঙ্গই হয়ে ওঠে প্রধান অবলম্বন। নতুন করে একে অপরকে আবিষ্কার করার সুযোগও আসে। অবসর মানেই শুধু অবকাশ নয়, অনেক সময় তা হয় নতুন এক মানসিক পরীক্ষার শুরু। দিনের পর দিন একসঙ্গে কাটানো যা একসময় স্বপ্ন মনে হতো, বাস্তবে এসে দেখা দেয় নানা টানাপোড়েন। আগে যে ব্যস্ততা দূরত্ব তৈরি করত, এখন সেই ঘনিষ্ঠতা থেকে জন্ম নেয় বিরক্তি, খুঁতখুঁতানি কিংবা নীরব অভিযোগ দীর্ঘদিন কর্মজীবনের বাইরে এসে কেউ কেউ নিজেদের অপ্রয়োজনীয় মনে করতে থাকেন, আত্মমর্যাদায় চিড় ধরে।
সেই অস্থিরতা অজান্তেই ছড়িয়ে পড়ে দাম্পত্যে। একে অপরের অভ্যাস কিংবা মতাদর্শে অসহিষ্ণুতা তৈরি হয়, আর ছোটখাটো বিষয় থেকেই জন্ম নেয় ভুল বোঝাবুঝি। অনেক দম্পতির মধ্যেই দেখা যায় একধরনের অস্বস্তি। দীর্ঘদিন একে অপরকে দেখে অভ্যস্ত হলেও, কাছাকাছি সময় কাটানোর অভ্যাস তৈরি না থাকলে একে অপরের ছোটখাটো আচরণও হয়ে ওঠে বিরক্তির কারণ। কারো টিভি দেখার অভ্যাস, কারো অতিরিক্ত নীরবতা, আবার কারো সব বিষয়ে মতামত দেওয়া এইসব ছোট ছোট বিষয়গুলো থেকেই জন্ম নেয় মানসিক দূরত্ব। তবু এই দ্বন্দ্বই বুঝিয়ে দেয় সম্পর্কের ভিত কতটা শক্ত, কতটা সহনশীল। যদি ভালোবাসার জায়গাটা অটুট থাকে, তবে এমন চ্যালেঞ্জও হয়ে উঠতে পারে নতুন করে কাছে আসার উপলক্ষ।
অবসরের পর সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে ওঠে অর্থ ও পরিচয়ের পরিবর্তন। নিয়মিত আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়, জীবন নির্ভর করে সীমিত পেনশন কিংবা সঞ্চয়ের উপর। প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশি খরচ করলেই মনে জন্ম নেয় অপরাধবোধ, আর সঙ্গীর চোখে খুঁতখুঁতানি। এই চাপ অনেক সময় সম্পর্কেও ছায়া ফেলে। একসময় কর্মক্ষেত্রে যে মানুষ ছিলেন সম্মানিত, পরামর্শদাতা, সিদ্ধান্ত-নির্মাতা অবসরের পর ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলেন সেই পরিচয়। বন্ধুদের সংখ্যা কমে আসে, ব্যস্ত সন্তানদের জীবনেও নিজের জায়গাটা হয়ে ওঠে অপ্রাসঙ্গিক। এই আর্থিক অনিশ্চয়তা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা একসঙ্গে মিলে দম্পতির মাঝে জন্ম দেয় একধরনের নিঃসঙ্গতা, শূন্যতা ও মানসিক ক্লান্তি। তবু এই বাস্তবতা মেনে নিয়েও জীবনকে সুন্দর করে তোলা সম্ভব যদি দু’জন মানুষ একে অপরকে একটু বেশি বোঝেন, একটু বেশি সময় দেন। দাম্পত্য জীবনে অবসরের পর যে জটিলতা তৈরি হয়, তার কোনো ম্যাজিক সমাধান নেই। কিন্তু ভালোবাসা যদি থাকে, তাহলে প্রতিকূলতার মধ্যেও পথ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়। প্রথমেই প্রয়োজন খোলামেলা কথা বলা চুপ করে থাকলে ভুল বোঝাবুঝি জমে ওঠে, সম্পর্কে চির ধরে ঘন কুয়াশায়। এ সময়টিতে একে অপরের প্রতি সহনশীল হওয়া জরুরি। সব অভ্যাস বদলানো সম্ভব নয়, কিন্তু মানিয়ে নেওয়া যায়। প্রতিদিন কিছুটা সময় শুধু নিজেদের জন্য রাখা এক কাপ চা, একটা হাঁটার সময়, কিংবা পুরোনো অ্যালবামের পাতা উল্টে বসে থাকা এসব ছোট ছোট মুহূর্তই দিতে পারে সম্পর্ককে নতুন আশ্রয়।চাইলে দু’জনে মিলে কিছু নতুন কাজ শুরু করা যায় বাগান করা, বই পড়া, সমাজসেবায় যুক্ত হওয়া কিংবা পুরোনো কোনো শখকে আবার জীবন্ত করে তোলা।
এতে জীবনে আসে অর্থপূর্ণ ব্যস্ততা, সম্পর্ক পায় নতুন স্পন্দন। সবচেয়ে জরুরি, একে অপরকে বোঝার চেষ্টা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যদি কেউ কাউকে আবার নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারেন তবে সেই দাম্পত্যই হয়ে ওঠে জীবনের সবচেয়ে নির্ভরতার জায়গা। পরিশেষে বলবো, অবসরের পর দাম্পত্য সম্পর্ক এক নতুন রূপ নেয়। কখনো তা হয় রঙিন, কখনো বিবর্ণ, আবার কখনো তা রঙের বাইরেও একটি নির্জন অথচ গভীর অনুভবের ক্ষেত্র। জীবনসায়াহ্নে এই সম্পর্কের গভীরতা আসলে নির্ভর করে দু’জন মানুষের মানসিক পরিপক্বতা, আন্তরিকতা ও সহমর্মিতার উপর। এই রঙ বদল যদি বোঝাপড়ার আলোয় রাঙানো যায়, তবে জীবনের শেষ প্রান্তটুকুও হয়ে উঠতে পারে আনন্দময়, প্রশান্তিময় ও পরিপূর্ণ।
লেখক: কৃষিবিদ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান, ডিআরপি ফাউন্ডেশন।