নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭ নভেম্বর, ২০২৫, 6:28 PM
তীব্র গণরোষের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ১৫ মাস পর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে ছাত্র-জনতার ওপর চালানো দমন-পীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের দায় অস্বীকার করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদনে তাঁকে 'মূল সমন্বয়ক' হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু-কে ইমেইল মারফত দেওয়া এক লিখিত সাক্ষাৎকারে তিনি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকেই দায়ী করেছেন।
তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন, সেই 'বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি'তে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিক্রিয়ায় 'নিঃসন্দেহে ভুল হয়েছিল'।
দায় কার? 'সমন্বয়ক' থেকে 'ভুল' স্বীকার
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় সরকারি বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের সহিংসতায় জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে এক হাজার চারশ’র বেশি মানুষ নিহত হন এবং হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত ও পঙ্গু হন।
জাতিসংঘের অভিযোগ: জাতিসংঘের তদন্ত এবং বিবিসির ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং (যেখানে হাসিনা নিজেই প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দেন) অনুসারে, শেখ হাসিনা দমন-পীড়নে সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
হাসিনার দাবি: এই গুরুতর অভিযোগ অস্বীকার করে হাসিনা বলেন, "মাঠপর্যায়ের নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত পরিবর্তিত এবং সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন। সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্যের আচরণে নিঃসন্দেহে ভুল হয়েছিল..."
তিনি আরও দাবি করেন যে, জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তগুলো ছিল 'সৎ উদ্দেশ্যপ্রসূত এবং প্রাণহানি কমানোর লক্ষ্যে নেওয়া।'
নির্বাচন ও বৈধতার প্রশ্ন
২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন।
নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে মতবদল: সম্প্রতি বিদেশি গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানানোর খবর প্রকাশিত হলেও, এবার তিনি সুর পাল্টেছেন। হাসিনা বলেন, "স্পষ্ট করে বলি: আমি বর্জনের আহ্বান জানাইনি। আমি শুধু বলেছিলাম, যদি আওয়ামী লীগকে ভোটে অংশ নিতে না দেওয়া হয়, তাহলে কোটি কোটি সমর্থক ভোট দেবে না..."
বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন: তিনি দাবি করেছেন, আসন্ন নির্বাচন হলে সেটা বৈধ হিসেবে স্বীকৃত হবে না, যদি তার দল আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণের সুযোগ না পায়।
আইসিটি বিচার ও পদত্যাগ নিয়ে বিতর্ক
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) বর্তমানে বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনাল তার শাসনামলে স্কাইপি কেলেঙ্কারি ও সাক্ষী গুমের অভিযোগে বিতর্কিত ছিল।
আদালতের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন: হাসিনা বর্তমান আইসিটির বিচারকে 'প্রহসনমূলক আদালত' আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এর রায় আগে থেকেই নির্ধারিত। তিনি দাবি করেন, এই আদালত তার রাজনৈতিক শত্রুরা নিয়ন্ত্রণ করছে, যাদের উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা।
এছাড়া, ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ার আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি বলেও দাবি করেন। তার মতে, "প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে একটি চিঠি জমা দিতে হয়। আমি কখনো এমন কোনো চিঠিতে সই করিনি..."
ইউনূস সরকারের মন্ত্রিসভায় 'উগ্রপন্থী' নিয়োগের অভিযোগ
দেশে না ফেরার কারণ হিসেবে শেখ হাসিনা 'চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি'কে দায়ী করেছেন। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ইউনূস তার মন্ত্রিসভায় কিছু 'উগ্রপন্থিকে' নিয়োগ দিয়েছেন, যা এই গোষ্ঠীকে উৎসাহ ও বাস্তব সহায়তা দিচ্ছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭ নভেম্বর, ২০২৫, 6:28 PM
তীব্র গণরোষের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ১৫ মাস পর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে ছাত্র-জনতার ওপর চালানো দমন-পীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের দায় অস্বীকার করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদনে তাঁকে 'মূল সমন্বয়ক' হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু-কে ইমেইল মারফত দেওয়া এক লিখিত সাক্ষাৎকারে তিনি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকেই দায়ী করেছেন।
তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন, সেই 'বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি'তে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিক্রিয়ায় 'নিঃসন্দেহে ভুল হয়েছিল'।
দায় কার? 'সমন্বয়ক' থেকে 'ভুল' স্বীকার
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় সরকারি বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের সহিংসতায় জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে এক হাজার চারশ’র বেশি মানুষ নিহত হন এবং হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত ও পঙ্গু হন।
জাতিসংঘের অভিযোগ: জাতিসংঘের তদন্ত এবং বিবিসির ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং (যেখানে হাসিনা নিজেই প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দেন) অনুসারে, শেখ হাসিনা দমন-পীড়নে সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
হাসিনার দাবি: এই গুরুতর অভিযোগ অস্বীকার করে হাসিনা বলেন, "মাঠপর্যায়ের নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত পরিবর্তিত এবং সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন। সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্যের আচরণে নিঃসন্দেহে ভুল হয়েছিল..."
তিনি আরও দাবি করেন যে, জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তগুলো ছিল 'সৎ উদ্দেশ্যপ্রসূত এবং প্রাণহানি কমানোর লক্ষ্যে নেওয়া।'
নির্বাচন ও বৈধতার প্রশ্ন
২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন।
নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে মতবদল: সম্প্রতি বিদেশি গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানানোর খবর প্রকাশিত হলেও, এবার তিনি সুর পাল্টেছেন। হাসিনা বলেন, "স্পষ্ট করে বলি: আমি বর্জনের আহ্বান জানাইনি। আমি শুধু বলেছিলাম, যদি আওয়ামী লীগকে ভোটে অংশ নিতে না দেওয়া হয়, তাহলে কোটি কোটি সমর্থক ভোট দেবে না..."
বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন: তিনি দাবি করেছেন, আসন্ন নির্বাচন হলে সেটা বৈধ হিসেবে স্বীকৃত হবে না, যদি তার দল আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণের সুযোগ না পায়।
আইসিটি বিচার ও পদত্যাগ নিয়ে বিতর্ক
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) বর্তমানে বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনাল তার শাসনামলে স্কাইপি কেলেঙ্কারি ও সাক্ষী গুমের অভিযোগে বিতর্কিত ছিল।
আদালতের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন: হাসিনা বর্তমান আইসিটির বিচারকে 'প্রহসনমূলক আদালত' আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এর রায় আগে থেকেই নির্ধারিত। তিনি দাবি করেন, এই আদালত তার রাজনৈতিক শত্রুরা নিয়ন্ত্রণ করছে, যাদের উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা।
এছাড়া, ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ার আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি বলেও দাবি করেন। তার মতে, "প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে একটি চিঠি জমা দিতে হয়। আমি কখনো এমন কোনো চিঠিতে সই করিনি..."
ইউনূস সরকারের মন্ত্রিসভায় 'উগ্রপন্থী' নিয়োগের অভিযোগ
দেশে না ফেরার কারণ হিসেবে শেখ হাসিনা 'চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি'কে দায়ী করেছেন। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ইউনূস তার মন্ত্রিসভায় কিছু 'উগ্রপন্থিকে' নিয়োগ দিয়েছেন, যা এই গোষ্ঠীকে উৎসাহ ও বাস্তব সহায়তা দিচ্ছে।