নিজস্ব প্রতিবেদক
০৫ নভেম্বর, ২০২৫, 5:31 PM
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বর্ষা মৌসুম পেরিয়ে গেলেও এডিস মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০৬৯ জন ডেঙ্গু রোগী।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ১০ জন, চলতি বছরে মোট মৃত্যু ৩০২ জন গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ১০৬৯ জন। চলতি বছরে মোট রোগী ৭৪,৯৯২ জন। বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ ও সতর্কতাস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে এডিস মশার প্রজনন চক্র দীর্ঘায়িত হচ্ছে। নভেম্বরেও তাপমাত্রা মশা বংশবিস্তারের উপযোগী থাকায় ডেঙ্গুর দাপট অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
তারা বলছেন, বাড়ির আশেপাশে কোথাও তিন দিনের বেশি পানি জমতে দেওয়া যাবে না। ফুলের টব, টায়ার, ড্রাম বা পরিত্যক্ত পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। দিনের বেলায়ও মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার বা অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে। জ্বর বা ডেঙ্গুর কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে সরকার ও সাধারণ মানুষ উভয় পক্ষকেই সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ ও জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।
ডেঙ্গু বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার নভেম্বরেও ডেঙ্গুর দাপট থাকবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এডিস মশার ঘনত্ব তাই বলছে। তিনি বলেন, এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর মশার ঘনত্ব বেশি। আবার এ বছর রোগীও বেশি। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, আগস্ট-সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এই তিন মাস ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ ঝুঁকির সময় হিসেবে ধরা হয়। এবছর আক্রান্ত ও মৃত্যু তাই প্রমাণ করে। তিনি আরও বলেন, এডিস মশার ব্রিডিং সোর্স ধ্বংস করতে হবে। যেসব জায়গায় জনবলের ঘাটতি আছে তা মিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে হবে। জনসাধারণকে নিজের বাড়ি, বাড়ির আঙ্গিনায় পানি যাতে না জমে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ (এএইচআরবি)-এর আহ্বায়ক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ এক প্রবন্ধে ডেঙ্গু সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু এখন আর কেবল মৌসুমি বা শহুরে রোগ নয়, এর বিস্তার ঘটেছে সারা দেশে এবং প্রায় সব মৌসুমেই।
সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো মাঝেমধ্যে ফগার মেশিনে কীটনাশক ছিটিয়ে দায় সারছে। অথচ গবেষণা বলছে, এ ধরনের ফগিংয়ে আসলে ডেঙ্গুর মূল বাহক এডিস মশা দমন হয় না।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালগুলোয় শয্যাসংকট, ডাক্তার-নার্সের ওপর অতিরিক্ত চাপ ও পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহের অভাব ডেঙ্গুর চিকিৎসাব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করে তুলছে। প্রশাসনিকভাবে দায়সারা কাজ হচ্ছে, কিন্তু সুসংগঠিত ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা অনুপস্থিত। ডেঙ্গু শুধু একটি রোগ নয়, এটি আমাদের অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার প্রতিচ্ছবি। আমরা যদি এখনো হাত গুটিয়ে বসে থাকি, তবে মৃত্যু আরও বাড়বে, পরিবারগুলো ভাঙবে, সমাজ ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়বে। এখনো সময় আছে আমাদের বিবেক ও চেতনা জাগ্রত করার। আমরা সাধারণ নাগরিকেরাও দায় এড়াতে পারি না।
ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমাতে হলে এখনই সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দেন তিনি। স্থানীয় সরকারকে নেতৃত্ব দিতে হবে ওয়ার্ডভিত্তিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও কার্যকর মশানিধন কর্মসূচির মাধ্যমে। মশানিধন কর্মসূচি সফল করতে হলে এর পুরো ইকোসিস্টেমকে সম্পূর্ণ কার্যকর করে তুলতে হবে। এ জন্য কিছু মৌলিক দিক নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সম্মিলিত উদ্যোগে, নিজ নিজ এলাকার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের (সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ বা ইউনিয়ন পরিষদের) নেতৃত্বে এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে একটি টেকসই ও কার্যকর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন এই বিশেষজ্ঞ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৫ নভেম্বর, ২০২৫, 5:31 PM
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বর্ষা মৌসুম পেরিয়ে গেলেও এডিস মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০৬৯ জন ডেঙ্গু রোগী।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ১০ জন, চলতি বছরে মোট মৃত্যু ৩০২ জন গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ১০৬৯ জন। চলতি বছরে মোট রোগী ৭৪,৯৯২ জন। বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ ও সতর্কতাস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে এডিস মশার প্রজনন চক্র দীর্ঘায়িত হচ্ছে। নভেম্বরেও তাপমাত্রা মশা বংশবিস্তারের উপযোগী থাকায় ডেঙ্গুর দাপট অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
তারা বলছেন, বাড়ির আশেপাশে কোথাও তিন দিনের বেশি পানি জমতে দেওয়া যাবে না। ফুলের টব, টায়ার, ড্রাম বা পরিত্যক্ত পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। দিনের বেলায়ও মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার বা অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে। জ্বর বা ডেঙ্গুর কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে সরকার ও সাধারণ মানুষ উভয় পক্ষকেই সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ ও জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।
ডেঙ্গু বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার নভেম্বরেও ডেঙ্গুর দাপট থাকবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এডিস মশার ঘনত্ব তাই বলছে। তিনি বলেন, এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর মশার ঘনত্ব বেশি। আবার এ বছর রোগীও বেশি। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, আগস্ট-সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এই তিন মাস ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ ঝুঁকির সময় হিসেবে ধরা হয়। এবছর আক্রান্ত ও মৃত্যু তাই প্রমাণ করে। তিনি আরও বলেন, এডিস মশার ব্রিডিং সোর্স ধ্বংস করতে হবে। যেসব জায়গায় জনবলের ঘাটতি আছে তা মিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে হবে। জনসাধারণকে নিজের বাড়ি, বাড়ির আঙ্গিনায় পানি যাতে না জমে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ (এএইচআরবি)-এর আহ্বায়ক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ এক প্রবন্ধে ডেঙ্গু সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু এখন আর কেবল মৌসুমি বা শহুরে রোগ নয়, এর বিস্তার ঘটেছে সারা দেশে এবং প্রায় সব মৌসুমেই।
সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো মাঝেমধ্যে ফগার মেশিনে কীটনাশক ছিটিয়ে দায় সারছে। অথচ গবেষণা বলছে, এ ধরনের ফগিংয়ে আসলে ডেঙ্গুর মূল বাহক এডিস মশা দমন হয় না।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালগুলোয় শয্যাসংকট, ডাক্তার-নার্সের ওপর অতিরিক্ত চাপ ও পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহের অভাব ডেঙ্গুর চিকিৎসাব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করে তুলছে। প্রশাসনিকভাবে দায়সারা কাজ হচ্ছে, কিন্তু সুসংগঠিত ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা অনুপস্থিত। ডেঙ্গু শুধু একটি রোগ নয়, এটি আমাদের অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার প্রতিচ্ছবি। আমরা যদি এখনো হাত গুটিয়ে বসে থাকি, তবে মৃত্যু আরও বাড়বে, পরিবারগুলো ভাঙবে, সমাজ ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়বে। এখনো সময় আছে আমাদের বিবেক ও চেতনা জাগ্রত করার। আমরা সাধারণ নাগরিকেরাও দায় এড়াতে পারি না।
ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমাতে হলে এখনই সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দেন তিনি। স্থানীয় সরকারকে নেতৃত্ব দিতে হবে ওয়ার্ডভিত্তিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও কার্যকর মশানিধন কর্মসূচির মাধ্যমে। মশানিধন কর্মসূচি সফল করতে হলে এর পুরো ইকোসিস্টেমকে সম্পূর্ণ কার্যকর করে তুলতে হবে। এ জন্য কিছু মৌলিক দিক নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সম্মিলিত উদ্যোগে, নিজ নিজ এলাকার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের (সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ বা ইউনিয়ন পরিষদের) নেতৃত্বে এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে একটি টেকসই ও কার্যকর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন এই বিশেষজ্ঞ।