নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ অক্টোবর, ২০২৫, 4:23 PM
বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি যুগোপযোগী আইনের খসড়া অবশেষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। 'কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০২৪' নামে অভিহিতব্য এই খসড়া নিয়ে বর্তমানে জনমত গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে কতদিন এই মতামত প্রক্রিয়া চলবে, তা মন্ত্রণালয় থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, ২০০৯ সালে হাইকোর্ট যৌন হয়রানিবিরোধী নীতিমালা প্রণয়নের সময়ই এর আলোকে একটি আইন করার কথা বলেছিল। দীর্ঘ ১৬ বছরেও সেই আইন না হওয়ায় তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন, তবে বর্তমান খসড়াটিকে তারা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।যৌন হয়রানির ভয়াবহ চিত্রবিভিন্ন জরিপ ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীরা নিয়মিত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, যার ফলে অনেকে পড়ালেখা বা চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।প্রতিষ্ঠানের জরিপসময়তথ্যআইন ও সালিশ কেন্দ্রজানুয়ারি ২০২৫উত্ত্যক্তকারীদের মাধ্যমে ১১ জন নারী যৌন হয়রানির শিকার।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র২০২৪ সালযৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে ১৬৫টি।আইন ও সালিশ কেন্দ্র২০২৩ সালযৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে ১৪২টি।বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ২০২০ সালের জরিপপ্রায় ৪৩% নারী কর্মস্থলে যৌন হয়রানির শিকার; ৫৮% নারী শারীরিক বা মানসিকভাবে হয়রানির শিকার।মহিলা পরিষদের জরিপে আরও দেখা যায়, কর্মস্থলে যৌন হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ জানালেও কর্তৃপক্ষ প্রায়শই সঠিক পদক্ষেপ নেয় না বা বিষয়টি উপেক্ষা করে।খসড়া আইনে কী আছে?হাইকোর্টের নীতিমালাকে ভিত্তি ধরে তৈরি করা এই খসড়ায় যৌন হয়রানির সংজ্ঞা, অভিযোগ কমিটি গঠন, তদন্ত প্রক্রিয়া, শাস্তি এবং আপিলের সুযোগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।অভিযোগ কমিটি: অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত পরিচালনা ও সুপারিশের জন্য প্রতিটি কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে।শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: শাস্তির ক্ষেত্রে তিরস্কার, লিখিত সতর্কীকরণ, টাইমস্কেল বন্ধ, বাধ্যতামূলক অবসর থেকে শুরু করে চাকরিচ্যুতির বিধান রাখা হয়েছে।আপিল: অভ্যন্তরীণ কমিটির সুপারিশে ক্ষতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তি সিদ্ধান্তের ৩০ দিনের মধ্যে এখতিয়ার সম্পন্ন জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন।
যৌন হয়রানি হিসেবে গণ্য কাজসমূহখসড়া আইনে যেসব কাজ যৌন হয়রানি হিসেবে গণ্য হবে, তার একটি বিস্তারিত তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:শারীরিক সংস্পর্শ বা যৌনতার জন্য অগ্রসর হওয়া।যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য প্রশাসনিক বা কর্তৃত্বমূলক ক্ষমতার অপব্যবহার।যৌনতা বিষয়ক মন্তব্য, তামাশা বা অন্যান্য মৌখিক ক্রিয়াকলাপ।পর্নোগ্রাফি দেখানো বা কামুক দৃষ্টি ও শিস দেওয়া।ব্ল্যাকমেইলিং বা মর্যাদাহানির উদ্দেশ্যে কারও স্থির বা ভিডিওচিত্র ধারণ, সংরক্ষণ, বিতরণ বা প্রকাশ করা।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ আপত্তিকর বার্তা পাঠানো।কারও জেন্ডার পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে কটূক্তি বা পিতৃতান্ত্রিক ধারণাপ্রসূত অবমাননাকর মন্তব্য করা।নারী অধিকারকর্মীদের প্রত্যাশানারী অধিকারকর্মী খুশি কবীর এই আইন আরও আগে হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, "আইন হলে হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা কথা বলতে সাহস পাবে। নির্দেশনা (হাইকোর্টের নীতিমালা) সবাই জানে না এবং প্রয়োগে বাধ্য করে না। আইন থাকলে প্রয়োগে বাধ্য করা যায়।"মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মমতাজ আহমেদ নিশ্চিত করেছেন যে, খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং বর্তমানে এ বিষয়ে জনমত নেওয়া হচ্ছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ অক্টোবর, ২০২৫, 4:23 PM
বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি যুগোপযোগী আইনের খসড়া অবশেষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। 'কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০২৪' নামে অভিহিতব্য এই খসড়া নিয়ে বর্তমানে জনমত গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে কতদিন এই মতামত প্রক্রিয়া চলবে, তা মন্ত্রণালয় থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, ২০০৯ সালে হাইকোর্ট যৌন হয়রানিবিরোধী নীতিমালা প্রণয়নের সময়ই এর আলোকে একটি আইন করার কথা বলেছিল। দীর্ঘ ১৬ বছরেও সেই আইন না হওয়ায় তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন, তবে বর্তমান খসড়াটিকে তারা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।যৌন হয়রানির ভয়াবহ চিত্রবিভিন্ন জরিপ ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীরা নিয়মিত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, যার ফলে অনেকে পড়ালেখা বা চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।প্রতিষ্ঠানের জরিপসময়তথ্যআইন ও সালিশ কেন্দ্রজানুয়ারি ২০২৫উত্ত্যক্তকারীদের মাধ্যমে ১১ জন নারী যৌন হয়রানির শিকার।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র২০২৪ সালযৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে ১৬৫টি।আইন ও সালিশ কেন্দ্র২০২৩ সালযৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে ১৪২টি।বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ২০২০ সালের জরিপপ্রায় ৪৩% নারী কর্মস্থলে যৌন হয়রানির শিকার; ৫৮% নারী শারীরিক বা মানসিকভাবে হয়রানির শিকার।মহিলা পরিষদের জরিপে আরও দেখা যায়, কর্মস্থলে যৌন হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ জানালেও কর্তৃপক্ষ প্রায়শই সঠিক পদক্ষেপ নেয় না বা বিষয়টি উপেক্ষা করে।খসড়া আইনে কী আছে?হাইকোর্টের নীতিমালাকে ভিত্তি ধরে তৈরি করা এই খসড়ায় যৌন হয়রানির সংজ্ঞা, অভিযোগ কমিটি গঠন, তদন্ত প্রক্রিয়া, শাস্তি এবং আপিলের সুযোগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।অভিযোগ কমিটি: অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত পরিচালনা ও সুপারিশের জন্য প্রতিটি কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে।শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: শাস্তির ক্ষেত্রে তিরস্কার, লিখিত সতর্কীকরণ, টাইমস্কেল বন্ধ, বাধ্যতামূলক অবসর থেকে শুরু করে চাকরিচ্যুতির বিধান রাখা হয়েছে।আপিল: অভ্যন্তরীণ কমিটির সুপারিশে ক্ষতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তি সিদ্ধান্তের ৩০ দিনের মধ্যে এখতিয়ার সম্পন্ন জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন।
যৌন হয়রানি হিসেবে গণ্য কাজসমূহখসড়া আইনে যেসব কাজ যৌন হয়রানি হিসেবে গণ্য হবে, তার একটি বিস্তারিত তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:শারীরিক সংস্পর্শ বা যৌনতার জন্য অগ্রসর হওয়া।যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য প্রশাসনিক বা কর্তৃত্বমূলক ক্ষমতার অপব্যবহার।যৌনতা বিষয়ক মন্তব্য, তামাশা বা অন্যান্য মৌখিক ক্রিয়াকলাপ।পর্নোগ্রাফি দেখানো বা কামুক দৃষ্টি ও শিস দেওয়া।ব্ল্যাকমেইলিং বা মর্যাদাহানির উদ্দেশ্যে কারও স্থির বা ভিডিওচিত্র ধারণ, সংরক্ষণ, বিতরণ বা প্রকাশ করা।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ আপত্তিকর বার্তা পাঠানো।কারও জেন্ডার পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে কটূক্তি বা পিতৃতান্ত্রিক ধারণাপ্রসূত অবমাননাকর মন্তব্য করা।নারী অধিকারকর্মীদের প্রত্যাশানারী অধিকারকর্মী খুশি কবীর এই আইন আরও আগে হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, "আইন হলে হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা কথা বলতে সাহস পাবে। নির্দেশনা (হাইকোর্টের নীতিমালা) সবাই জানে না এবং প্রয়োগে বাধ্য করে না। আইন থাকলে প্রয়োগে বাধ্য করা যায়।"মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মমতাজ আহমেদ নিশ্চিত করেছেন যে, খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং বর্তমানে এ বিষয়ে জনমত নেওয়া হচ্ছে।