ধর্ম ডেস্ক
১৩ নভেম্বর, ২০২৫, 5:19 PM
উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা (রা.) নবীজি (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী। তিনি নারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম ঈমান গ্রহণ করেছিলেন। হজরত খাদিজা (রা.) কুরাইশ বংশের ছিলেন। তাঁর পিতার নাম খুওয়াইলিদ এবং মাতার নাম ফাতেমা। হজরত খাদিজা (রা.) প্রাক-ইসলামি যুগের কুপ্রথা থেকে নিজেকে বিরত রাখায় তাঁকে ‘তাহেরা’ উপাধি দেওয়া হয়। নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে হজরত খাদিজা (রা.) ব্যক্তিগত জীবনে একজন বিধবা নারী ছিলেন। সম্ভ্রান্ত ও ধনাঢ্যও ছিলেন তিনি।
নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে বিয়ে : হজরত খাদিজা (রা.) প্রথমে আবু হালাহ বিন জারারার সঙ্গে এবং আবু হালাহর মৃত্যুর পর দ্বিতীয়বার আতিকা বিন আয়েজের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। অতঃপর আতিকা মারা গেলে তিনি নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের সময় হজরত খাদিজা (রা.)-এর চল্লিশ এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পঁচিশ বছর বয়স ছিল। হজরত খাদিজা (রা.) জীবিত থাকা অবস্থায় নবীজি (সা.) দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। তিনি ছিলেন একজন গুণবতী নারী। পঁচিশটি বছর নবীজি (সা.)-এর সান্নিধ্যে কাটান তিনি। হজরত খাদিজা (রা.)-এর গর্ভে রাসুল (সা.)-এর দুই পুত্র ও চার কন্যা জন্মগ্রহণ করেন। দুই পুত্রের নাম হলো কাসেম ও তাহের এবং চার কন্যার নাম হলো জয়নাব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম ও ফাতেমা (রা.)। (সিরাতে মুস্তফা : ৩/২৩০)
নবীজি (সা.)-এর খেদমতে সম্পদ দান : হজরত খাদিজা (রা.) আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের অপেক্ষায় ছিলেন। এ ছাড়া তিনি আরবের সচেতন ও শিক্ষিত প্রবীণদের কাছে শেষ নবীর নিদর্শন সম্পর্কে মাঝেমধ্যে জিজ্ঞাসা করতেন। কিন্তু কী সৌভাগ্য নবুয়ত প্রাপ্তির আগেই রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে পরিচয় ঘটল হজরত খাদিজা (রা.)-এর। তিনি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিজের ব্যবসায়িক কাজ সম্পাদনের জন্য সিরিয়ায় পাঠালেন। এরপরই খাদিজা (রা.)-এর কাছে রাসুল (সা.)-এর সৎ গুণাবলি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। হজরত খাদিজা (রা.) বুঝতে পারলেন মানব সমাজের অতুলনীয় ও পবিত্রতম প্রাণপুরুষ হচ্ছেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। অতঃপর তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান এবং দুজনের দাম্পত্যজীবন শুরু হয়। আর বিয়ের পরই হজরত খাদিজা (রা.) নিজের সব সম্পদের দায়দায়িত্ব রাসুল (সা.)-এর ওপর ছেড়ে দেন এবং তাঁকে ইচ্ছামতো সম্পদ খরচ করার অনুমতি দেন। (জুরকানি : ৩/২২০; সিরাতে মুস্তফা : ৩/২২৬)
খাদিজা (রা.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব : হজরত খাদিজা (রা.) ছিলেন নবীজি (সা.)-এর সব বিপদের বিশ্বস্ত সহযোগী। জাহেলি যুগের কোনো অন্যায় তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তাঁর উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্বের নারীদের জন্য অনুপম আদর্শ। তাই হজরত খাদিজা (রা.)-কে নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হজরত আলি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মরিয়ম বিনতে ইমরান ছিলেন তৎকালীন দুনিয়ার নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আর খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ হলেন বর্তমান উম্মতের সমুদয় নারী সমাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। (বুখারি : ৩৮৬৩; মুসলিম : ৬৪২৪)
জান্নাতের প্রাসাদের সুসংবাদ : মক্কাবাসী যখন নবী করিম (সা.)-কে উপেক্ষা করছিল এবং তাঁকে মিথ্যাবাদী হিসেবে অপবাদ দিচ্ছিল, তখন হজরত খাদিজা (রা.) দৃঢ়তার সঙ্গে নবীজি (সা.)-কে বিশ্বাস করেছিলেন। কুরাইশদের সমূহ বিপদে তিনি নবীজি (সা.)-এর জন্য ঢালস্বরূপ ভূমিকা রেখেছিলেন। এমনকি তিনি নবীজি (সা.)-কে অর্থসম্পদ দিয়েও সহযোগিতা করেছিলেন। সব কাজে শক্তি ও সাহস জোগাতেন তিনি। হাদিস শরিফে হজরত খাদিজা (রা.)-কে জান্নাতের প্রাসাদ দ্বারা সম্মানিত করার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদিন হজরত জিবরাইল (আ.) নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এই যে খাদিজা একটি পাত্র নিয়ে আসছেন। তাতে তরকারি ও খাওয়ার দ্রব্য রয়েছে। তিনি যখন আপনার কাছে আসবেন, তখন তাঁকে তাঁর রবের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম বলবেন এবং তাঁকে জান্নাতের মধ্যে মুক্তাখচিত এমন একটি প্রাসাদের সুসংবাদ প্রদান করবেন, যেখানে না কোনো হৈ-হুল্লোড় আর না কোনো কষ্ট রয়েছে। (বুখারি : ৩৮৬৭; মুসলিম : ৬৪২৬)
খাদিজা (রা.)-এর ইন্তেকাল : কুরাইশ সম্প্রদায় কর্তৃক আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধের সময়কার কষ্ট ও অনাহারের কারণে হজরত খাদিজা (রা.)-এর শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এমন অবস্থায় নবুয়তের দশম বছরে ৬৫ বছর বয়সে মক্কায় ইন্তেকাল করেন তিনি। অতঃপর মক্কার কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। রাসুল (সা.) স্বয়ং তাঁকে কবরে রাখেন। তিনি অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন পবিত্র ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী নারী। তাঁর অনুপম আদর্শ আজ অবধি উম্মতে মুসলিমার হৃদয় দর্পণে চির ভাস্বর হয়ে আছে। (আর রাহিকুল মাখতুম : পৃষ্ঠ ১৫৯; রহমাতুল লিল আলামিন : ২/১৬৪)
ধর্ম ডেস্ক
১৩ নভেম্বর, ২০২৫, 5:19 PM
উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা (রা.) নবীজি (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী। তিনি নারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম ঈমান গ্রহণ করেছিলেন। হজরত খাদিজা (রা.) কুরাইশ বংশের ছিলেন। তাঁর পিতার নাম খুওয়াইলিদ এবং মাতার নাম ফাতেমা। হজরত খাদিজা (রা.) প্রাক-ইসলামি যুগের কুপ্রথা থেকে নিজেকে বিরত রাখায় তাঁকে ‘তাহেরা’ উপাধি দেওয়া হয়। নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে হজরত খাদিজা (রা.) ব্যক্তিগত জীবনে একজন বিধবা নারী ছিলেন। সম্ভ্রান্ত ও ধনাঢ্যও ছিলেন তিনি।
নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে বিয়ে : হজরত খাদিজা (রা.) প্রথমে আবু হালাহ বিন জারারার সঙ্গে এবং আবু হালাহর মৃত্যুর পর দ্বিতীয়বার আতিকা বিন আয়েজের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। অতঃপর আতিকা মারা গেলে তিনি নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের সময় হজরত খাদিজা (রা.)-এর চল্লিশ এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পঁচিশ বছর বয়স ছিল। হজরত খাদিজা (রা.) জীবিত থাকা অবস্থায় নবীজি (সা.) দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। তিনি ছিলেন একজন গুণবতী নারী। পঁচিশটি বছর নবীজি (সা.)-এর সান্নিধ্যে কাটান তিনি। হজরত খাদিজা (রা.)-এর গর্ভে রাসুল (সা.)-এর দুই পুত্র ও চার কন্যা জন্মগ্রহণ করেন। দুই পুত্রের নাম হলো কাসেম ও তাহের এবং চার কন্যার নাম হলো জয়নাব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম ও ফাতেমা (রা.)। (সিরাতে মুস্তফা : ৩/২৩০)
নবীজি (সা.)-এর খেদমতে সম্পদ দান : হজরত খাদিজা (রা.) আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের অপেক্ষায় ছিলেন। এ ছাড়া তিনি আরবের সচেতন ও শিক্ষিত প্রবীণদের কাছে শেষ নবীর নিদর্শন সম্পর্কে মাঝেমধ্যে জিজ্ঞাসা করতেন। কিন্তু কী সৌভাগ্য নবুয়ত প্রাপ্তির আগেই রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে পরিচয় ঘটল হজরত খাদিজা (রা.)-এর। তিনি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিজের ব্যবসায়িক কাজ সম্পাদনের জন্য সিরিয়ায় পাঠালেন। এরপরই খাদিজা (রা.)-এর কাছে রাসুল (সা.)-এর সৎ গুণাবলি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। হজরত খাদিজা (রা.) বুঝতে পারলেন মানব সমাজের অতুলনীয় ও পবিত্রতম প্রাণপুরুষ হচ্ছেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। অতঃপর তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান এবং দুজনের দাম্পত্যজীবন শুরু হয়। আর বিয়ের পরই হজরত খাদিজা (রা.) নিজের সব সম্পদের দায়দায়িত্ব রাসুল (সা.)-এর ওপর ছেড়ে দেন এবং তাঁকে ইচ্ছামতো সম্পদ খরচ করার অনুমতি দেন। (জুরকানি : ৩/২২০; সিরাতে মুস্তফা : ৩/২২৬)
খাদিজা (রা.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব : হজরত খাদিজা (রা.) ছিলেন নবীজি (সা.)-এর সব বিপদের বিশ্বস্ত সহযোগী। জাহেলি যুগের কোনো অন্যায় তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তাঁর উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্বের নারীদের জন্য অনুপম আদর্শ। তাই হজরত খাদিজা (রা.)-কে নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হজরত আলি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মরিয়ম বিনতে ইমরান ছিলেন তৎকালীন দুনিয়ার নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আর খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ হলেন বর্তমান উম্মতের সমুদয় নারী সমাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। (বুখারি : ৩৮৬৩; মুসলিম : ৬৪২৪)
জান্নাতের প্রাসাদের সুসংবাদ : মক্কাবাসী যখন নবী করিম (সা.)-কে উপেক্ষা করছিল এবং তাঁকে মিথ্যাবাদী হিসেবে অপবাদ দিচ্ছিল, তখন হজরত খাদিজা (রা.) দৃঢ়তার সঙ্গে নবীজি (সা.)-কে বিশ্বাস করেছিলেন। কুরাইশদের সমূহ বিপদে তিনি নবীজি (সা.)-এর জন্য ঢালস্বরূপ ভূমিকা রেখেছিলেন। এমনকি তিনি নবীজি (সা.)-কে অর্থসম্পদ দিয়েও সহযোগিতা করেছিলেন। সব কাজে শক্তি ও সাহস জোগাতেন তিনি। হাদিস শরিফে হজরত খাদিজা (রা.)-কে জান্নাতের প্রাসাদ দ্বারা সম্মানিত করার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদিন হজরত জিবরাইল (আ.) নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এই যে খাদিজা একটি পাত্র নিয়ে আসছেন। তাতে তরকারি ও খাওয়ার দ্রব্য রয়েছে। তিনি যখন আপনার কাছে আসবেন, তখন তাঁকে তাঁর রবের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম বলবেন এবং তাঁকে জান্নাতের মধ্যে মুক্তাখচিত এমন একটি প্রাসাদের সুসংবাদ প্রদান করবেন, যেখানে না কোনো হৈ-হুল্লোড় আর না কোনো কষ্ট রয়েছে। (বুখারি : ৩৮৬৭; মুসলিম : ৬৪২৬)
খাদিজা (রা.)-এর ইন্তেকাল : কুরাইশ সম্প্রদায় কর্তৃক আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধের সময়কার কষ্ট ও অনাহারের কারণে হজরত খাদিজা (রা.)-এর শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এমন অবস্থায় নবুয়তের দশম বছরে ৬৫ বছর বয়সে মক্কায় ইন্তেকাল করেন তিনি। অতঃপর মক্কার কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। রাসুল (সা.) স্বয়ং তাঁকে কবরে রাখেন। তিনি অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন পবিত্র ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী নারী। তাঁর অনুপম আদর্শ আজ অবধি উম্মতে মুসলিমার হৃদয় দর্পণে চির ভাস্বর হয়ে আছে। (আর রাহিকুল মাখতুম : পৃষ্ঠ ১৫৯; রহমাতুল লিল আলামিন : ২/১৬৪)