CKEditor 5 Sample
ঢাকা ২১ নভেম্বর, ২০২৫

জলবায়ু ন্যায়বিচারে বাংলাদেশের ৫ দফা দাবি

#
news image

অ্যামাজন রেইনফরেস্টের প্রবেশদ্বার বেলেমে আগামী সোমবার (১০ নভেম্বর) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের ৩০তম অধিবেশন (কপ-৩০)। কিন্তু রাজনৈতিক বিভাজন, অর্থায়নের তীব্র ঘাটতি এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই সম্মেলন থেকে জলবায়ুর ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখার মতো বড় কোনো সাফল্যের প্রত্যাশা করছেন না কূটনীতিক ও পর্যবেক্ষকরা।

বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এবারের সম্মেলনে জলবায়ু ন্যায়বিচার, অভিযোজন সহায়তা এবং বৈশ্বিক অর্থায়ন— এই তিনটি মূল ইস্যু বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে একটি সরকারি প্রতিনিধিদল বেলেমের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।

বাংলাদেশের ৫ অগ্রাধিকারমূলক লক্ষ্য

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সচিব ফারহিনা আহমেদ এই প্রতিনিধিদলে না থাকলেও, বাংলাদেশ এই সম্মেলনকে সফল করার জন্য পাঁচটি অগ্রাধিকারমূলক লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে:

  • ১. নতুন অর্থায়ন লক্ষ্য: ২০৩৫ সালের মধ্যে বার্ষিক ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নতুন বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্য নির্ধারণ।

  • ২. ক্ষয়ক্ষতি তহবিল (L&D): ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ তহবিল (লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড) ২০২৬ সালের মধ্যে চালু করা, যাতে তারা সরাসরি অর্থায়ন পেতে পারে।

  • ৩. অভিযোজন দ্বিগুণ: ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করা, বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে পরিচালিত, নারী ও তরুণ নেতৃত্বাধীন প্রকল্পে সহায়তা।

  • ৪. জ্বালানি রূপান্তর: ন্যায়সঙ্গত জ্বালানি রূপান্তর নিশ্চিত করা, যেখানে কর্মসংস্থান ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সমান সুযোগ থাকবে।

  • ৫. আঞ্চলিক স্থিতিস্থাপকতা: ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সীমান্তবর্তী জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানো।

সেন্টার ফর ক্লাইমেট অ্যান্ড অ্যানভায়রনমেন্টাল রিসার্চের (সিসিইইআর) সহকারী পরিচালক রওফা খানম বলেন, "বাংলাদেশের জনগণ ইতোমধ্যে বৈশ্বিক নিষ্ক্রিয়তার মূল্য দিচ্ছে। এখন আর কেবল প্রতিশ্রুতির কথা নয়, আমরা চাই জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার।"

 

অর্থই জলবায়ু ন্যায়বিচারের ভিত্তি: ড. আইনুন নিশাত

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যামেরিটাস অধ্যাপক ও খ্যাতনামা জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত মনে করেন, এই সম্মেলনে বাংলাদেশকে তার লক্ষ্যগুলো খুব স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "জলবায়ু অর্থায়নে সরাসরি প্রবেশাধিকারই বাংলাদেশের মূল দাবি হওয়া উচিত। অর্থই জলবায়ু ন্যায়বিচারের ভিত্তি।"

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে নয়, বরং উদ্ভাবনী ও সহনশীল জাতি হিসেবে (ভাসমান কৃষি, সাইক্লোন আশ্রয়কেন্দ্র) বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করা উচিত।

 

কূটনৈতিক গতি মন্থর, কমেছে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা

প্যারিস চুক্তির দশ বছর পরও কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি ও অপূর্ণ অর্থায়ন প্রতিশ্রুতি আন্তর্জাতিক জলবায়ু কূটনীতিতে আস্থা নষ্ট করেছে। ইউরোপীয় এক আলোচক বলেন, "কপ-৩০-এর আসল পরীক্ষা হলো, এটি বক্তব্যের বাইরে গিয়ে কার্যকর অঙ্গীকার আনতে পারবে কি-না।"

ইউএনএফসিসি'র তথ্য অনুযায়ী, এবারের বেলেম সম্মেলনে মাত্র ১২ হাজার ২০০ জন প্রতিনিধি নিবন্ধন করেছেন। যা গত বছরের দুবাই কপ-২৮-এর তুলনায় প্রায় ৭ গুণ কম। পর্যটন অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা, হোটেল ঘাটতি ও ব্যয়বহুল যাতায়াত খরচের কারণে অনেক দেশ প্রতিনিধিদল ছোট করেছে।

 

ব্রাজিলের বার্তা: অ্যামাজন পৃথিবীর ফুসফুস

আয়োজক দেশ ব্রাজিল এই সম্মেলনকে অ্যামাজন রেইনফরেস্ট সংরক্ষণ এবং উষ্ণমণ্ডলীয় বন রক্ষাকে বৈশ্বিক নীতির কেন্দ্রে আনার প্রতীকী মুহূর্ত হিসেবে তুলে ধরছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা ইতোমধ্যে উষ্ণমণ্ডলীয় বন রক্ষায় আর্থিক কাঠামো হিসেবে ‘ট্রপিক্যাল ফরেস্ট ফরেভার ফ্যাসিলিটি’ ঘোষণা করেছেন।

অন্যদিকে, অ্যামাজন নদীর পথে শতাধিক আদিবাসী নেতা নৌবহর নিয়ে বেলেমে আসছেন, যারা নিজেদের 'বনের রক্ষক' হিসেবে তুলে ধরছেন। আদিবাসী কর্মী ও মন্ত্রী সোনিয়া গুয়াজাজারা বলেছেন, "অ্যামাজন ধ্বংস হলে জলবায়ু ব্যবস্থাও ধসে পড়বে।"

ড. নিশাতের শেষ মন্তব্য, "বেলেম থেকে অলৌকিক কিছু আশা করা ঠিক নয়। তবে যদি কপ-৩০ বাস্তব ফলাফল দিতে ব্যর্থ হয়, এটি শুধু কূটনৈতিক ব্যর্থতা হবে না—এটি হবে মানবতার ব্যর্থতা।"

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৮ নভেম্বর, ২০২৫,  3:30 PM

news image

অ্যামাজন রেইনফরেস্টের প্রবেশদ্বার বেলেমে আগামী সোমবার (১০ নভেম্বর) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের ৩০তম অধিবেশন (কপ-৩০)। কিন্তু রাজনৈতিক বিভাজন, অর্থায়নের তীব্র ঘাটতি এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই সম্মেলন থেকে জলবায়ুর ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখার মতো বড় কোনো সাফল্যের প্রত্যাশা করছেন না কূটনীতিক ও পর্যবেক্ষকরা।

বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এবারের সম্মেলনে জলবায়ু ন্যায়বিচার, অভিযোজন সহায়তা এবং বৈশ্বিক অর্থায়ন— এই তিনটি মূল ইস্যু বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে একটি সরকারি প্রতিনিধিদল বেলেমের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।

বাংলাদেশের ৫ অগ্রাধিকারমূলক লক্ষ্য

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সচিব ফারহিনা আহমেদ এই প্রতিনিধিদলে না থাকলেও, বাংলাদেশ এই সম্মেলনকে সফল করার জন্য পাঁচটি অগ্রাধিকারমূলক লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে:

  • ১. নতুন অর্থায়ন লক্ষ্য: ২০৩৫ সালের মধ্যে বার্ষিক ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নতুন বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্য নির্ধারণ।

  • ২. ক্ষয়ক্ষতি তহবিল (L&D): ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ তহবিল (লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড) ২০২৬ সালের মধ্যে চালু করা, যাতে তারা সরাসরি অর্থায়ন পেতে পারে।

  • ৩. অভিযোজন দ্বিগুণ: ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করা, বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে পরিচালিত, নারী ও তরুণ নেতৃত্বাধীন প্রকল্পে সহায়তা।

  • ৪. জ্বালানি রূপান্তর: ন্যায়সঙ্গত জ্বালানি রূপান্তর নিশ্চিত করা, যেখানে কর্মসংস্থান ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সমান সুযোগ থাকবে।

  • ৫. আঞ্চলিক স্থিতিস্থাপকতা: ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সীমান্তবর্তী জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানো।

সেন্টার ফর ক্লাইমেট অ্যান্ড অ্যানভায়রনমেন্টাল রিসার্চের (সিসিইইআর) সহকারী পরিচালক রওফা খানম বলেন, "বাংলাদেশের জনগণ ইতোমধ্যে বৈশ্বিক নিষ্ক্রিয়তার মূল্য দিচ্ছে। এখন আর কেবল প্রতিশ্রুতির কথা নয়, আমরা চাই জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার।"

 

অর্থই জলবায়ু ন্যায়বিচারের ভিত্তি: ড. আইনুন নিশাত

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যামেরিটাস অধ্যাপক ও খ্যাতনামা জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত মনে করেন, এই সম্মেলনে বাংলাদেশকে তার লক্ষ্যগুলো খুব স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "জলবায়ু অর্থায়নে সরাসরি প্রবেশাধিকারই বাংলাদেশের মূল দাবি হওয়া উচিত। অর্থই জলবায়ু ন্যায়বিচারের ভিত্তি।"

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে নয়, বরং উদ্ভাবনী ও সহনশীল জাতি হিসেবে (ভাসমান কৃষি, সাইক্লোন আশ্রয়কেন্দ্র) বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করা উচিত।

 

কূটনৈতিক গতি মন্থর, কমেছে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা

প্যারিস চুক্তির দশ বছর পরও কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি ও অপূর্ণ অর্থায়ন প্রতিশ্রুতি আন্তর্জাতিক জলবায়ু কূটনীতিতে আস্থা নষ্ট করেছে। ইউরোপীয় এক আলোচক বলেন, "কপ-৩০-এর আসল পরীক্ষা হলো, এটি বক্তব্যের বাইরে গিয়ে কার্যকর অঙ্গীকার আনতে পারবে কি-না।"

ইউএনএফসিসি'র তথ্য অনুযায়ী, এবারের বেলেম সম্মেলনে মাত্র ১২ হাজার ২০০ জন প্রতিনিধি নিবন্ধন করেছেন। যা গত বছরের দুবাই কপ-২৮-এর তুলনায় প্রায় ৭ গুণ কম। পর্যটন অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা, হোটেল ঘাটতি ও ব্যয়বহুল যাতায়াত খরচের কারণে অনেক দেশ প্রতিনিধিদল ছোট করেছে।

 

ব্রাজিলের বার্তা: অ্যামাজন পৃথিবীর ফুসফুস

আয়োজক দেশ ব্রাজিল এই সম্মেলনকে অ্যামাজন রেইনফরেস্ট সংরক্ষণ এবং উষ্ণমণ্ডলীয় বন রক্ষাকে বৈশ্বিক নীতির কেন্দ্রে আনার প্রতীকী মুহূর্ত হিসেবে তুলে ধরছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা ইতোমধ্যে উষ্ণমণ্ডলীয় বন রক্ষায় আর্থিক কাঠামো হিসেবে ‘ট্রপিক্যাল ফরেস্ট ফরেভার ফ্যাসিলিটি’ ঘোষণা করেছেন।

অন্যদিকে, অ্যামাজন নদীর পথে শতাধিক আদিবাসী নেতা নৌবহর নিয়ে বেলেমে আসছেন, যারা নিজেদের 'বনের রক্ষক' হিসেবে তুলে ধরছেন। আদিবাসী কর্মী ও মন্ত্রী সোনিয়া গুয়াজাজারা বলেছেন, "অ্যামাজন ধ্বংস হলে জলবায়ু ব্যবস্থাও ধসে পড়বে।"

ড. নিশাতের শেষ মন্তব্য, "বেলেম থেকে অলৌকিক কিছু আশা করা ঠিক নয়। তবে যদি কপ-৩০ বাস্তব ফলাফল দিতে ব্যর্থ হয়, এটি শুধু কূটনৈতিক ব্যর্থতা হবে না—এটি হবে মানবতার ব্যর্থতা।"