CKEditor 5 Sample
ঢাকা ২০ নভেম্বর, ২০২৫

‘চোকার্স’ তকমা কি এবার দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েদেরও?

#
news image

ফাইনাল শেষে নাবি মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে যখন ভারতীয় দল শিরোপার উৎসব করছে, অন্যপ্রান্তে দক্ষিণ আফ্রিকার ডাগআউটের দৃশ্যটা ছিল হৃদয়বিদারক। সম্ভবত নিজের শেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে নামা মারিজান কাপ বসে ছিলেন অশ্রুসজল চোখে। পাশাপাশি বসা অধিনায়ক লরা উলভার্ডট আর নাদিন দে ক্লার্কের চোখে অবিশ্বাসের ছাপ, মুখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ব্যর্থ চেষ্টা। টাজমিন ব্রিটস একা বসে হয়তো ভাবছিলেন, ‘আর একটু পারলেইৃ’।
একেকটা ফাইনাল, আর স্বপ্নভঙ্গের হতাশা—এ দৃশ্য যেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে অভিশাপের মতো লেগে আছে। পুরুষ কিংবা নারী ক্রিকেট—শেষ মুহূর্তে এসে হোঁচট খাওয়ার গল্প দলটির পুরোনো রোগ। ঘুরেফিরে তাই প্রশ্নটাও আবার উঠছে, দক্ষিণ আফ্রিকা কি এখনও সেই ‘চোকার্স’?
২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের ঘরের মাটিতে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দল। যদিও সেবার রানার্স-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাদের। এবার আরও পরিণত দল নিয়ে তারা পৌঁছে গিয়েছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে ফাইনালে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে লড়াইও করল দারুণভাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফল একই—হৃদয়ভাঙা হার।
অনেকে মনে করেন, ফাইনালে উঠলেই দক্ষিণ আফ্রিকার কী যেন হয়। চাপটা ঠিক সহ্য করতে পারে না। কিন্তু এবারের ফাইনালের পারফরম্যান্সে নজর রাখলে কিছুটা ব্যতিক্রমই মনে হবে। তারা লড়েছে, সুযোগও তৈরি করেছে, কিন্তু ভাগ্যটা যেন প্রতিবারের মতোই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সদ্য সমাপ্ত টুর্নামেন্টে প্রোটিয়া কিংবদন্তী উলভার্ডটের পারফরম্যান্স ছিল অনন্য। এক আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি, পুরো ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে টানা শতক, পুরো আসরে আটটি ক্যাচ আর মাঠে নিখুঁত নেতৃত্ব—সব মিলিয়ে দুর্দান্ত একটি আসর। তবু ভাগ্যের ফেরে ট্রফি উঠল না তার হাতে।
ম্যাচশেষে উলভার্ডট বলেন, “আজ (গতকাল) আমরা পিছিয়ে পড়েছি, ভারত আমাদের চেয়ে ভালো খেলেছে। তবে এই টুর্নামেন্টে আমরা দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। একসময় টানা পাঁচ ম্যাচ জিতেছিলাম। আমাদের দলের জন্য এটি বড় অর্জন। ধারাবাহিকতা খুঁজে পাওয়া এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আরও যোগ করেন, পুরো টুর্নামেন্টে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন খেলোয়াড় এগিয়ে এসেছে। উপমহাদেশের কন্ডিশনে স্পিনের বিপক্ষে আমরা ভালো খেলেছি। আমাদের পেসাররাও দারুণ করেছে। অনেক সময় স্পিনারদের চেয়ে ভালো ইকোনমিতে বোলিং করেছে। কাপ (মারিজান কাপ) ছিল দুর্দান্ত, নাদিনও অসাধারণ পারফর্ম করেছে। বিশ্বকাপের আগে এক বছরে ১৩ ওয়ানডেতে মাত্র ছয়টি জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ইংল্যান্ডের কাছে সিরিজ হার, ভারত–শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজেও ফাইনালে উঠতে পারেনি তারা। অথচ বিশ্বকাপে সেই দুই দলকেই হারিয়েছে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপপর্বে ৬৯ রানে অলআউট হওয়ার পর সেমিফাইনালে ১২৫ রানের জয়ে প্রতিশোধও নিয়েছে। 
কোচ মান্ডলা মাশিম্বিয়ি, যিনি মাত্র ১০ মাস ধরে দলের দায়িত্বে আছেন। তিনি বলছিলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দলের উন্নতি দেখে গর্ব হয়। যখন কেউ আমাদের সুযোগ দেয়নি, তখন আমরা নিজেরাই নিজেদের বিশ্বাস করেছি। ফাইনালে পৌঁছানোই প্রমাণ করে আমরা এগোচ্ছি। দক্ষিণ আফ্রিকা পুরুষ ক্রিকেট দল অনেক পরিণত হলেও নারী দল এখনও সংগ্রাম কররেছ। পেশাদার ক্রিকেট কাঠামোতে এসেছে এক যুগ হয়েছে তাদের। তবু এই সময়েই ছয়টি ভিন্ন ফরম্যাট ও স্তরের ফাইনালে পৌঁছেছে দেশটি। মাশিম্বিয়ি বলছিলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রিকেট এখন দারুণ পর্যায়ে আছে। ভুল থেকে শিখেই আমরা এগোচ্ছি।’

স্পোর্টস ডেস্ক 

০৩ নভেম্বর, ২০২৫,  5:46 PM

news image

ফাইনাল শেষে নাবি মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে যখন ভারতীয় দল শিরোপার উৎসব করছে, অন্যপ্রান্তে দক্ষিণ আফ্রিকার ডাগআউটের দৃশ্যটা ছিল হৃদয়বিদারক। সম্ভবত নিজের শেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে নামা মারিজান কাপ বসে ছিলেন অশ্রুসজল চোখে। পাশাপাশি বসা অধিনায়ক লরা উলভার্ডট আর নাদিন দে ক্লার্কের চোখে অবিশ্বাসের ছাপ, মুখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ব্যর্থ চেষ্টা। টাজমিন ব্রিটস একা বসে হয়তো ভাবছিলেন, ‘আর একটু পারলেইৃ’।
একেকটা ফাইনাল, আর স্বপ্নভঙ্গের হতাশা—এ দৃশ্য যেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে অভিশাপের মতো লেগে আছে। পুরুষ কিংবা নারী ক্রিকেট—শেষ মুহূর্তে এসে হোঁচট খাওয়ার গল্প দলটির পুরোনো রোগ। ঘুরেফিরে তাই প্রশ্নটাও আবার উঠছে, দক্ষিণ আফ্রিকা কি এখনও সেই ‘চোকার্স’?
২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের ঘরের মাটিতে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দল। যদিও সেবার রানার্স-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাদের। এবার আরও পরিণত দল নিয়ে তারা পৌঁছে গিয়েছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে ফাইনালে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে লড়াইও করল দারুণভাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফল একই—হৃদয়ভাঙা হার।
অনেকে মনে করেন, ফাইনালে উঠলেই দক্ষিণ আফ্রিকার কী যেন হয়। চাপটা ঠিক সহ্য করতে পারে না। কিন্তু এবারের ফাইনালের পারফরম্যান্সে নজর রাখলে কিছুটা ব্যতিক্রমই মনে হবে। তারা লড়েছে, সুযোগও তৈরি করেছে, কিন্তু ভাগ্যটা যেন প্রতিবারের মতোই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সদ্য সমাপ্ত টুর্নামেন্টে প্রোটিয়া কিংবদন্তী উলভার্ডটের পারফরম্যান্স ছিল অনন্য। এক আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি, পুরো ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে টানা শতক, পুরো আসরে আটটি ক্যাচ আর মাঠে নিখুঁত নেতৃত্ব—সব মিলিয়ে দুর্দান্ত একটি আসর। তবু ভাগ্যের ফেরে ট্রফি উঠল না তার হাতে।
ম্যাচশেষে উলভার্ডট বলেন, “আজ (গতকাল) আমরা পিছিয়ে পড়েছি, ভারত আমাদের চেয়ে ভালো খেলেছে। তবে এই টুর্নামেন্টে আমরা দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। একসময় টানা পাঁচ ম্যাচ জিতেছিলাম। আমাদের দলের জন্য এটি বড় অর্জন। ধারাবাহিকতা খুঁজে পাওয়া এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আরও যোগ করেন, পুরো টুর্নামেন্টে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন খেলোয়াড় এগিয়ে এসেছে। উপমহাদেশের কন্ডিশনে স্পিনের বিপক্ষে আমরা ভালো খেলেছি। আমাদের পেসাররাও দারুণ করেছে। অনেক সময় স্পিনারদের চেয়ে ভালো ইকোনমিতে বোলিং করেছে। কাপ (মারিজান কাপ) ছিল দুর্দান্ত, নাদিনও অসাধারণ পারফর্ম করেছে। বিশ্বকাপের আগে এক বছরে ১৩ ওয়ানডেতে মাত্র ছয়টি জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ইংল্যান্ডের কাছে সিরিজ হার, ভারত–শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজেও ফাইনালে উঠতে পারেনি তারা। অথচ বিশ্বকাপে সেই দুই দলকেই হারিয়েছে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপপর্বে ৬৯ রানে অলআউট হওয়ার পর সেমিফাইনালে ১২৫ রানের জয়ে প্রতিশোধও নিয়েছে। 
কোচ মান্ডলা মাশিম্বিয়ি, যিনি মাত্র ১০ মাস ধরে দলের দায়িত্বে আছেন। তিনি বলছিলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দলের উন্নতি দেখে গর্ব হয়। যখন কেউ আমাদের সুযোগ দেয়নি, তখন আমরা নিজেরাই নিজেদের বিশ্বাস করেছি। ফাইনালে পৌঁছানোই প্রমাণ করে আমরা এগোচ্ছি। দক্ষিণ আফ্রিকা পুরুষ ক্রিকেট দল অনেক পরিণত হলেও নারী দল এখনও সংগ্রাম কররেছ। পেশাদার ক্রিকেট কাঠামোতে এসেছে এক যুগ হয়েছে তাদের। তবু এই সময়েই ছয়টি ভিন্ন ফরম্যাট ও স্তরের ফাইনালে পৌঁছেছে দেশটি। মাশিম্বিয়ি বলছিলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রিকেট এখন দারুণ পর্যায়ে আছে। ভুল থেকে শিখেই আমরা এগোচ্ছি।’