নিজস্ব প্রতিবেদক
৩১ অক্টোবর, ২০২৫, 6:06 PM
বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটকের ফোরজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পটি প্রায় আট বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থবির হয়ে আছে। চীনা সরকারের কনসেশনাল লোন (জিসিএল) তহবিলের আওতায় নেওয়া এই প্রকল্পটি আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ এবং প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এই দীর্ঘসূত্রতা শুধু টেলিটককে দুর্বল করছে না, বরং ঢাকা-বেইজিং কূটনৈতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রকল্পের লক্ষ্য ও বর্তমান অবস্থা
প্রকল্পের উদ্দেশ্য: সারাদেশে ৩,২০০টি বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) স্থাপন (২,০০০টি নতুন এবং ১,২০০টি সংস্কার) করে টেলিটকের ফোরজি সেবা শক্তিশালী করা এবং গ্রাম-শহরের ডিজিটাল বৈষম্য কমানো।
বর্তমান সেবা: টেলিটক বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৬ হাজার সক্রিয় বিটিএস সাইট পরিচালনা করলেও, অনেক গ্রাম ও দুর্গম অঞ্চলে ব্যবহারকারীরা এখনও থ্রিজি বা টুজি নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও শর্ত লঙ্ঘন
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের (পিটিডি) অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের কারণে দরপত্র প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে, যা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে।
দরপত্র প্রত্যাখ্যান: ২০১৭ সালে ইআরডির সার্কুলারের পর চীনা সরকারের মনোনীত তিনটি প্রতিষ্ঠান ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দরপত্র জমা দেয়। কিন্তু ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে টিইসি সেগুলোকে ‘প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রহণযোগ্য’ ঘোষণা করে একই দরদাতাদের মধ্যে পুনরায় দর আহ্বানের সুপারিশ করে।
অস্বাভাবিক শর্ত: টেলিটকের বোর্ড এই সুপারিশ অনুমোদন দিলেও, কেন্দ্রীয় ক্রয় কারিগরি ইউনিট (সিপিটিইউ) একটি অস্বাভাবিক শর্ত জুড়ে দেয়— ইআরডির সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া, যা চীনা সরকারের বিশেষ ঋণ প্রকল্পের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল না।
কনসেশনাল লোনের শর্ত লঙ্ঘন: ইআরডি বেইজিংয়ের সঙ্গে আলোচনা না করে বরং দরদাতার সংখ্যা পাঁচ থেকে আটে বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। এই পদক্ষেপ কার্যত চীনের মনোনয়ন ক্ষমতা বাতিল করে দেয় এবং কনসেশনাল ঋণের শর্ত লঙ্ঘিত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, "এই পদক্ষেপ দ্বিপক্ষীয় কাঠামোর পরিপন্থী। এতে চীনের আস্থা ক্ষুণ্ণ হতে পারে এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতা প্রকল্পগুলো ঝুঁকিতে পড়তে পারে।"
লবিং ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর অভিযোগ, একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট প্রস্তুতকারকের হাতে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে লবিং করছে, যা স্বাভাবিক প্রতিযোগিতা ব্যাহত করবে।
টেলিকম বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ অব্যাহত থাকলে দ্বিপক্ষীয় ঋণ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, "চীন এসব প্রকল্পকে সরকারে-সরকারে প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিবেচনা করে। যদি বাংলাদেশ নিজেই সেই নীতিমালা উপেক্ষা করে, তাহলে পারস্পরিক আস্থার অবনতি ঘটবে এবং ভবিষ্যতে চীনা অর্থায়নের প্রকল্পগুলো থমকে যেতে পারে।"
নিজস্ব প্রতিবেদক
৩১ অক্টোবর, ২০২৫, 6:06 PM
বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটকের ফোরজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পটি প্রায় আট বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থবির হয়ে আছে। চীনা সরকারের কনসেশনাল লোন (জিসিএল) তহবিলের আওতায় নেওয়া এই প্রকল্পটি আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ এবং প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এই দীর্ঘসূত্রতা শুধু টেলিটককে দুর্বল করছে না, বরং ঢাকা-বেইজিং কূটনৈতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রকল্পের লক্ষ্য ও বর্তমান অবস্থা
প্রকল্পের উদ্দেশ্য: সারাদেশে ৩,২০০টি বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) স্থাপন (২,০০০টি নতুন এবং ১,২০০টি সংস্কার) করে টেলিটকের ফোরজি সেবা শক্তিশালী করা এবং গ্রাম-শহরের ডিজিটাল বৈষম্য কমানো।
বর্তমান সেবা: টেলিটক বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৬ হাজার সক্রিয় বিটিএস সাইট পরিচালনা করলেও, অনেক গ্রাম ও দুর্গম অঞ্চলে ব্যবহারকারীরা এখনও থ্রিজি বা টুজি নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও শর্ত লঙ্ঘন
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের (পিটিডি) অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের কারণে দরপত্র প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে, যা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে।
দরপত্র প্রত্যাখ্যান: ২০১৭ সালে ইআরডির সার্কুলারের পর চীনা সরকারের মনোনীত তিনটি প্রতিষ্ঠান ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দরপত্র জমা দেয়। কিন্তু ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে টিইসি সেগুলোকে ‘প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রহণযোগ্য’ ঘোষণা করে একই দরদাতাদের মধ্যে পুনরায় দর আহ্বানের সুপারিশ করে।
অস্বাভাবিক শর্ত: টেলিটকের বোর্ড এই সুপারিশ অনুমোদন দিলেও, কেন্দ্রীয় ক্রয় কারিগরি ইউনিট (সিপিটিইউ) একটি অস্বাভাবিক শর্ত জুড়ে দেয়— ইআরডির সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া, যা চীনা সরকারের বিশেষ ঋণ প্রকল্পের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল না।
কনসেশনাল লোনের শর্ত লঙ্ঘন: ইআরডি বেইজিংয়ের সঙ্গে আলোচনা না করে বরং দরদাতার সংখ্যা পাঁচ থেকে আটে বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। এই পদক্ষেপ কার্যত চীনের মনোনয়ন ক্ষমতা বাতিল করে দেয় এবং কনসেশনাল ঋণের শর্ত লঙ্ঘিত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, "এই পদক্ষেপ দ্বিপক্ষীয় কাঠামোর পরিপন্থী। এতে চীনের আস্থা ক্ষুণ্ণ হতে পারে এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতা প্রকল্পগুলো ঝুঁকিতে পড়তে পারে।"
লবিং ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর অভিযোগ, একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট প্রস্তুতকারকের হাতে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে লবিং করছে, যা স্বাভাবিক প্রতিযোগিতা ব্যাহত করবে।
টেলিকম বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ অব্যাহত থাকলে দ্বিপক্ষীয় ঋণ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, "চীন এসব প্রকল্পকে সরকারে-সরকারে প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিবেচনা করে। যদি বাংলাদেশ নিজেই সেই নীতিমালা উপেক্ষা করে, তাহলে পারস্পরিক আস্থার অবনতি ঘটবে এবং ভবিষ্যতে চীনা অর্থায়নের প্রকল্পগুলো থমকে যেতে পারে।"