নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ জুলাই, ২০২৫, 11:54 AM
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি এলাকার চারতলা আবাসিক ভবনে চলছে একটি স্কুল। সরু সিঁড়ি, তলায় তলায় গ্রিল ঘেরা জানালা, কক্ষগুলোতে চলছে এসি—একটি দুর্ঘটনা ঘটলে শিশুরা বের হবে কোন পথে? যেখানে মাত্র কয়েকটি পরিবারের থাকার কথা, সেখানে প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী দীর্ঘ সময় কাটাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে— শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন কি সাধারণ ভবনের মতো হবে, নাকি বিশেষায়িত হওয়া উচিত?
শিক্ষক ও স্থপতিরা মনে করছেন, স্কুলের ভবন হওয়া উচিত নিরাপদ ও বিশেষায়িত। সেখানে থাকতে হবে অগ্নি নির্বাপণের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমনের পথ এবং নির্মাণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা।
রাজধানীতে ভবন নির্মাণে রাজউক ও সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন নিয়ম থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে শিশুদের জন্য নির্মিত ভবনের ক্ষেত্রে আলাদা করে কোনও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। যেটুকু নির্দেশনা আছে, তাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানা হয় না। রাজউকের তথ্যমতে, রাজধানীতে যেসব প্রতিষ্ঠান ভবনের অনুমোদন নিয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগেরই নেই ব্যবহারযোগ্যতার (অকুপেন্সি) সনদ। এতে করে আগুন বা অন্য কোনো দুর্যোগ ঘটলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
একটি সরকারি কলেজের শিক্ষক অধ্যাপক মিল্কি আমাতুল মুগনী বলেন, ‘ছোট হোক কিংবা বড়—সব ভবনেই পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা থাকা জরুরি। স্কুলের ক্ষেত্রে তো আরও বেশি থাকা দরকার। সেই সঙ্গে অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র ব্যবহারে প্রশিক্ষণও থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মাইলস্টোন স্কুলের দুর্ঘটনা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। ভবনটি বহুতল না হলেও সেটি কতটা নিরাপদ ছিল, সেটিও ভাবার বিষয়।’
ধানমন্ডির বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক মোস্তফা মিয়াজী বলেন, ‘ফায়ার এক্সিট, ফায়ার হাইড্রেন্ট, ফায়ার অ্যালার্ম—এসব যেন ন্যূনতম শর্ত হয়। অথচ রাজধানীর বেশিরভাগ স্কুলে এসব নেই। অনেক ভবনে অগ্নিনির্বাপণের যন্ত্র থাকলেও সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।’
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণের জন্য কী ধরনের অনুমোদন প্রয়োজন জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণের অনুমতির প্রয়োজন নেই, সেটা দেখে শিক্ষা অধিদফতর। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নকশা, পরিকল্পনা ও অনুমোদনসহ অন্যান্য বিষয় দেখা হয়। নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, তা তদারকি করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।’
রাজউকের বিল্ডিং ইন্সপেক্টর সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী সব ধরনের ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কিছু বাড়তি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়—যেমন জমির মালিকানা, অগ্নি নিরাপত্তা, স্যানিটেশন, পরিবেশগত ছাড়পত্র ইত্যাদি।’ তিনি আরও জানান, পুরনো অনেক ভবনে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নেই, তবে নতুন ভবনের অনুমোদনে এই বিষয়টি কঠোরভাবে দেখা হচ্ছে।
স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে মনস্তাত্ত্বিক স্থাপত্য প্রয়োজন। পাঠদানের আগে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আবাসিক ভবন আর স্কুল ভবন এক নয়—এটা বোঝার মতো বোধও অনেকের নেই। আমরা শিশুদের জন্য আলাদা করে ভাবতেই শিখিনি।’
এদিকে রাজধানীর প্রতিটি ভবনে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়ে রাজউক সহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান। তিনি বলেন, ‘রাজধানীর প্রতিটি ভবনে—চাই সেটা বৈধ হোক বা অবৈধ—অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এই ব্যবস্থার অভাব থাকলে এর দায়ভার সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিতে হবে।’
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ জুলাই, ২০২৫, 11:54 AM
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি এলাকার চারতলা আবাসিক ভবনে চলছে একটি স্কুল। সরু সিঁড়ি, তলায় তলায় গ্রিল ঘেরা জানালা, কক্ষগুলোতে চলছে এসি—একটি দুর্ঘটনা ঘটলে শিশুরা বের হবে কোন পথে? যেখানে মাত্র কয়েকটি পরিবারের থাকার কথা, সেখানে প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী দীর্ঘ সময় কাটাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে— শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন কি সাধারণ ভবনের মতো হবে, নাকি বিশেষায়িত হওয়া উচিত?
শিক্ষক ও স্থপতিরা মনে করছেন, স্কুলের ভবন হওয়া উচিত নিরাপদ ও বিশেষায়িত। সেখানে থাকতে হবে অগ্নি নির্বাপণের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমনের পথ এবং নির্মাণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা।
রাজধানীতে ভবন নির্মাণে রাজউক ও সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন নিয়ম থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে শিশুদের জন্য নির্মিত ভবনের ক্ষেত্রে আলাদা করে কোনও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। যেটুকু নির্দেশনা আছে, তাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানা হয় না। রাজউকের তথ্যমতে, রাজধানীতে যেসব প্রতিষ্ঠান ভবনের অনুমোদন নিয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগেরই নেই ব্যবহারযোগ্যতার (অকুপেন্সি) সনদ। এতে করে আগুন বা অন্য কোনো দুর্যোগ ঘটলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
একটি সরকারি কলেজের শিক্ষক অধ্যাপক মিল্কি আমাতুল মুগনী বলেন, ‘ছোট হোক কিংবা বড়—সব ভবনেই পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা থাকা জরুরি। স্কুলের ক্ষেত্রে তো আরও বেশি থাকা দরকার। সেই সঙ্গে অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র ব্যবহারে প্রশিক্ষণও থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মাইলস্টোন স্কুলের দুর্ঘটনা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। ভবনটি বহুতল না হলেও সেটি কতটা নিরাপদ ছিল, সেটিও ভাবার বিষয়।’
ধানমন্ডির বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক মোস্তফা মিয়াজী বলেন, ‘ফায়ার এক্সিট, ফায়ার হাইড্রেন্ট, ফায়ার অ্যালার্ম—এসব যেন ন্যূনতম শর্ত হয়। অথচ রাজধানীর বেশিরভাগ স্কুলে এসব নেই। অনেক ভবনে অগ্নিনির্বাপণের যন্ত্র থাকলেও সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।’
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণের জন্য কী ধরনের অনুমোদন প্রয়োজন জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণের অনুমতির প্রয়োজন নেই, সেটা দেখে শিক্ষা অধিদফতর। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নকশা, পরিকল্পনা ও অনুমোদনসহ অন্যান্য বিষয় দেখা হয়। নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, তা তদারকি করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।’
রাজউকের বিল্ডিং ইন্সপেক্টর সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী সব ধরনের ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কিছু বাড়তি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়—যেমন জমির মালিকানা, অগ্নি নিরাপত্তা, স্যানিটেশন, পরিবেশগত ছাড়পত্র ইত্যাদি।’ তিনি আরও জানান, পুরনো অনেক ভবনে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নেই, তবে নতুন ভবনের অনুমোদনে এই বিষয়টি কঠোরভাবে দেখা হচ্ছে।
স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে মনস্তাত্ত্বিক স্থাপত্য প্রয়োজন। পাঠদানের আগে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আবাসিক ভবন আর স্কুল ভবন এক নয়—এটা বোঝার মতো বোধও অনেকের নেই। আমরা শিশুদের জন্য আলাদা করে ভাবতেই শিখিনি।’
এদিকে রাজধানীর প্রতিটি ভবনে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়ে রাজউক সহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান। তিনি বলেন, ‘রাজধানীর প্রতিটি ভবনে—চাই সেটা বৈধ হোক বা অবৈধ—অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এই ব্যবস্থার অভাব থাকলে এর দায়ভার সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিতে হবে।’