CKEditor 5 Sample
ঢাকা ২০ নভেম্বর, ২০২৫

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন:  যশোর- ৪ আসনে এমপি পদে আলোচনায় যারা

#
news image

যশোর- ৪ (অভয়নগর- বাঘারপাড়া ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনটি এক সময় আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত থাকলেও দীর্ঘ দিন ধরে এ আসনের মানুষের সেবা করে আসছে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব।  তবে, তিনি দীর্ঘদিন মাঠে থাকার সুবাদে দলের জন্য একসময় ব্যায়বহুল অর্থ খরচ করেছেন।  যে কারণে এই আসনে এক সময় তার বিকল্প ভাবেনি বিএনপি। কিন্তু বর্তমান সংস্কার বিএনপি যশোর– ৪ আসন নিয়ে নতুন করে ভাবছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছেন।  স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র জানায়, এ আসনে এক সময়ের জনপ্রিয় নেতা হলেন- টিএস আইয়ুব।  বিএনপির ৫ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু সাংগঠনিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে।  যে কারণে আইয়ুবকে সাংগঠনিক পদে রাখতে চায় বিএনপি।  তবে তাকে এমপির টিকিট থেকে বিরত রাখতে পারে দলটি।  ‍যদিও তিনি দীর্ঘদিন মাঠে থাকার সুবাদে একটি বার দল হয়তো তার কথা বিবেচনায় আনতে পারে।  তবে সেটাও চ্যালেঞ্জ দেখছেন অনেকেই।  সম্প্রতি বিএনপির একটি ৪ বিশিষ্ট সংশ্লিষ্ট একটি টিম তারেক রহমানের নির্দেশে যশোর-৪ সহ এ এলাকার আসন গুলো তদারকি করছেন।   যেটা নিয়ে সম্প্রতি দলটির বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে।

জানা যায়, দেশে স্বাধীনের পর এই আসন থেকে ১২টি নির্বাচনে ৮ টিতেই বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।  ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর পাল্টে গেছে এই আসনের ভোটের সমীকরণ।  ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হতে চায় বিএনপি।  পিছিয়ে নেই জামায়াতে ইসলামীও।  একক প্রার্থী নিয়ে জোরেশোরে মাঠে নেমেছে দলটির নেতাকর্মীরা।  যদিও জামায়াতের গ্রহণ যোগ্যতা মাঠে তেমনটা দেখা না গেলেও গোপনে কাজ করছে দলটির নেতাকর্মীরা।  

সূত্র জানায়, এই আসন থেকে বিএনপির ৫ নেতা দৌড়ঝাঁপ করছেন।  দীর্ঘদিনের জোট মিত্র বিএনপি-জামায়াত এবার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।  সেই হিসাবে ভোটের হিসাবনিকাশ ভিন্ন হতে পারে।  সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা ব্যানার- ফেস্টুন টাঙিয়ে সভা-সমাবেশ, মতবিনিময়, গণসংযোগ, বস্ত্র ও ত্রাণ বিতরণ প্রভৃতি কর্মসূচিতে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।  

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পল্টন অফিসের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, যশোর- ৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় অন্তত ৫ জনের নাম শোনা যাচ্ছে।  এরমধ্যে প্রথম হলেন – বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব।  তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সেবা করে আসছেন।  তবে ৫ আগস্টের পর প্রশ্নবিদ্ধ।  দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন- বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মসিয়ুর রহমান।  মসিয়ুর নম্র, ভদ্র, বিনয়ী মানুষ।  তিনি সব সময় নিরব থাকেন উশৃঙ্খল নয়।  এছাড়া জুলাই আগস্টে ফ্যাসিস্ট বিদায় আন্দোলনের অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন।  
এ পদে ৩ নম্বরে যার নাম আসছে তিনি হলেন– অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান।  তিনি বেশ জনপ্রিয় এবং ইমেজসম্পন্ন মানুষ।  আইয়ুবের সাথে তার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আছে বলে জানা গেছে।  তিনি এমপি হতে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করছেন।  ৪র্থ নম্বরে যার নাম আসছে তিনি হলেন – বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র আবদুল হাই মনা। মনা নিজেই টিএস আইয়ুবকে রাজনীতিতে আনছে এমনটায় জানালেও তিনি শেষ বয়সে একবার হলেও এমপির টিকিট চাইছেন।  এছাড়া ৫ম নম্বরে যার নাম আসছে তিনি হলেন- জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ।

দলীয় সূত্রে মতে ও যশোর- ৪ আসনের একাধিক বিএনপি’র নেতাকর্মীরা জানান, প্রথমে এমপি পদে একাই আলোচনায় শীর্ষ ছিলেন বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব।  আইয়ুব দীর্ঘ ২০-৩০ বছর মাঠ চষে বেড়ালেও ৫ আগষ্টের সরকার পতনের আন্দোলনে আগে ও পরে তার ভূমিকা অনেকটা নিষ্ক্রিয়।  এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকায় লোভ লালসার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছেন।  এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির এই নেতা অর্থনৈতিক সংকটে থাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা দল পরিচালনার বাবদ ধার ও ব্যবসায়ী বাবদ ধার নিলেও এ পর্যন্ত কারো টাকা নিজ ইচ্ছায় ফেরত দেননি বলে একাধিক অভিযোগ আছে।

জানা গেছে, আইয়ুব সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবু তাহের সিদ্দিকীর কাছ থেকে এক সময় লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন যা ফেরত দেননি।  ধলগ্রাম ইউনিয়ের বিএনপির যুবদলের শিমুল খাঁন এ বিষয়টি নিচ্শিত করেছেন।  শিমুলের মামা বাড়ি উপজেলায় হওয়ার সুবাদে তিনি সেখানে ঘুরতে গিয়ে একটি চায়ের দোকানে বসে এসব তথ্য জানান। 

দলীয় সূত্রে ও বিভিন্ন তথ্য মত মতে জানা গেছে, আইয়ুব দুদকের মামলায় জেলে থাকায় এই আসনের মানুষের সুখে দুঃখে দীর্ঘদিন পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন- প্রয়াত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ভক্ত ও তার ছেলে খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা এবং তার মা সদ্য বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস বেগমের সমর্থক বিএনপি নেতা মসিয়ুর রহমান ও আবদুল হাই মনা।  এরমধ্যে মসিয়ুরকে এলাকার সাধারণ মানুষ নম্র, ভদ্র, বিনয়ী বলে জানেন।  তার নামে প্রায় ৩০ টির মতো মামলা।  তবে এক্ষেত্রে ১ম আলোচনায় থাকা আইয়ুবের নামে মামলার সংখ্যা কম বলে জানা গেছে।  মসিয়ুরের মোট ৬ বার কারাদণ্ড হয়।  জেল থেটেছেন অনেক বার। 

সূত্র জানায়, মসিয়ুরের কপাল খুলছে দীর্ঘদিন কয়েকবার জেলে থাকা ও গেল বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সরকার পতনের এক দফা দাবির কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে কাকরাইল ও বিচারপতির বাস ভবনের সামনে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মাধ্যমে এবং সর্বশেষ ৫ আগষ্টে আওয়ামী সরকার পতনের আন্দোলনে সরাসরি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় বিশেষ দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে।  এছাড়া স্বচ্ছ থাকায় তার বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে তেমন কোনো অভিযোগ নেই।  বরং ত্যাগীদের পাশে রয়েছেন বলে জানা গেছে।  তথ্য মতে, তাকে এমপি পদে প্রার্থী হওয়ার পিছনে বড় সাপোর্ট দিচ্ছেন খুলনা বিভাগের বিএনপির এক প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যরা।

সূত্র জানায়, মসিয়ুরকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসাবে চেনেন এবং বিভিন্ন সময় তার সার্বিক বিষয়ে সুনজরে রেখে নানা মাধ্যমে খোঁজ খবর রাখছেন।  যদিও তারেক রহমান এরআগে বলেছেন- দলীয় অনেক নেতারা এমপির টিকিট পাবেন না।  যদিও কেউ এমপির টিকিট পান সেক্ষেত্রে তাকে দলীয় পদ ছাড়তে হবে।

এবার আসনটিতে বিএনপির অন্যতম প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব।  ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি মাত্র ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে নৌকার কাছে হেরে যান।  ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছিলেন।  তবে সেই নির্বাচনেও পরাজিত হন। এবারও তিনি সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে জোরেশোরে প্রচারণায় রয়েছেন।  তার বিকল্প হিসাবে ভোটের মাঠে বেশ সরব মসিয়ুরসহ অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজি মতিয়ার রহমান, বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই মনা এবং যুবদল নেতা অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী। 

যুবদল নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী কয়েকবার জেল খেটেছেন কারবরণ করেছেন।  ৫ আগষ্টের হাসিনা সরকারকে বিদায়ে তার অবদাব অনেক।  এবং তিনি যুব নেতা হিসেবে এমপি প্রার্থীর পদে আলোচনায় রয়েছেন। 

এ বিষয়ে প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব গণমাধ্যমকে বলছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম।  আমার নামে ৩৪টি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে।  অন্তত আটবার কারাবরণ করেছি।  দল ত্যাগী ও নিবেদিতদের মূল্যায়ন করবে বলে আশাবাদী।  তিনি বলেন, দুঃসময়ে যাদের দেখা যায়নি, তাদের অনেকেই এখন অতিথি পাখির মতো দলের মনোনয়ন পেতে চায়। এদের বিষয়ে তৃণমূল সতর্ক আছে।  

তবে আইয়ুবের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক মামলাগুলো আলাদা ভাবে জানা যায়নি।  সূত্র মতে সত্যতা যাচাই করে দেখা গেছে, তার নামে ১১টি মামলার মধ্যে নাশকতা মামলা ৭টি ও দুদকের মামলা ৪টি।  তবে আইয়ুব মোট ৪ বার কারাবরণ করেছে।

এ বিষয়ে বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মসিয়ুর রহমান বলেছেন, আমাদের আসন নিয়ে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।  তিনি এমপি হওয়ার যোগ্যতা রাখে।  তবে রাজধানী হলো ভাগ্যের ব্যাপার।  যার ভাগ্যে এমপির টিকিট জুটবে সেই যশোর- ৪ আসনের অভিভাবক হবেন।  এক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্ত যেটাই আসবে আমরা সেটাই আমরা মেনে নিবো।

এ বিষয়ে ফারাজী মতিয়ার রহমান বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় প্রার্থী হিসাবে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলাম। আশা করি এবার দলের মনোনয়ন পাব। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মাঠে আছি। সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করছি। বিগত সরকারের আমলে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। ২৭টি মামলার আসামি হয়েছি। কয়েকবার কারাবরণ করেছি।

অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ বলেন, ঋণখেলাপি, দুর্নীতির অভিযোগ আছে- এমন কাউকে দল মনোনয়ন দেবে না বলে জানিয়েছে দল।  সেক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজের তরুণ ও ত্যাগী নেতারা মনোনয়ন পাবেন।  আমি ১৭ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম।  জেল, জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি।  এলাকার মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি।  আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসূল প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি নিয়মিত এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন করছেন। দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে আমরা কর্মসূচি পালন করতে না পারলেও অভ্যন্তরীণ কাজ করেছি।  জনগণের সঙ্গে আমাদের আছে ইনশাআল্লাহ।  আমাদের দলের পক্ষে আমি একাই আছি বাকি দলের মধ্যে অরেক প্রার্থী।  দেখা যাক আল্লাহ কি করেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ জুন, ২০২৫,  6:23 PM

news image
যশোর- ৪ আসনে এমপি প্রর্থী

যশোর- ৪ (অভয়নগর- বাঘারপাড়া ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনটি এক সময় আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত থাকলেও দীর্ঘ দিন ধরে এ আসনের মানুষের সেবা করে আসছে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব।  তবে, তিনি দীর্ঘদিন মাঠে থাকার সুবাদে দলের জন্য একসময় ব্যায়বহুল অর্থ খরচ করেছেন।  যে কারণে এই আসনে এক সময় তার বিকল্প ভাবেনি বিএনপি। কিন্তু বর্তমান সংস্কার বিএনপি যশোর– ৪ আসন নিয়ে নতুন করে ভাবছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছেন।  স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র জানায়, এ আসনে এক সময়ের জনপ্রিয় নেতা হলেন- টিএস আইয়ুব।  বিএনপির ৫ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু সাংগঠনিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে।  যে কারণে আইয়ুবকে সাংগঠনিক পদে রাখতে চায় বিএনপি।  তবে তাকে এমপির টিকিট থেকে বিরত রাখতে পারে দলটি।  ‍যদিও তিনি দীর্ঘদিন মাঠে থাকার সুবাদে একটি বার দল হয়তো তার কথা বিবেচনায় আনতে পারে।  তবে সেটাও চ্যালেঞ্জ দেখছেন অনেকেই।  সম্প্রতি বিএনপির একটি ৪ বিশিষ্ট সংশ্লিষ্ট একটি টিম তারেক রহমানের নির্দেশে যশোর-৪ সহ এ এলাকার আসন গুলো তদারকি করছেন।   যেটা নিয়ে সম্প্রতি দলটির বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে।

জানা যায়, দেশে স্বাধীনের পর এই আসন থেকে ১২টি নির্বাচনে ৮ টিতেই বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।  ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর পাল্টে গেছে এই আসনের ভোটের সমীকরণ।  ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হতে চায় বিএনপি।  পিছিয়ে নেই জামায়াতে ইসলামীও।  একক প্রার্থী নিয়ে জোরেশোরে মাঠে নেমেছে দলটির নেতাকর্মীরা।  যদিও জামায়াতের গ্রহণ যোগ্যতা মাঠে তেমনটা দেখা না গেলেও গোপনে কাজ করছে দলটির নেতাকর্মীরা।  

সূত্র জানায়, এই আসন থেকে বিএনপির ৫ নেতা দৌড়ঝাঁপ করছেন।  দীর্ঘদিনের জোট মিত্র বিএনপি-জামায়াত এবার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।  সেই হিসাবে ভোটের হিসাবনিকাশ ভিন্ন হতে পারে।  সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা ব্যানার- ফেস্টুন টাঙিয়ে সভা-সমাবেশ, মতবিনিময়, গণসংযোগ, বস্ত্র ও ত্রাণ বিতরণ প্রভৃতি কর্মসূচিতে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।  

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পল্টন অফিসের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, যশোর- ৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় অন্তত ৫ জনের নাম শোনা যাচ্ছে।  এরমধ্যে প্রথম হলেন – বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব।  তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সেবা করে আসছেন।  তবে ৫ আগস্টের পর প্রশ্নবিদ্ধ।  দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন- বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মসিয়ুর রহমান।  মসিয়ুর নম্র, ভদ্র, বিনয়ী মানুষ।  তিনি সব সময় নিরব থাকেন উশৃঙ্খল নয়।  এছাড়া জুলাই আগস্টে ফ্যাসিস্ট বিদায় আন্দোলনের অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন।  
এ পদে ৩ নম্বরে যার নাম আসছে তিনি হলেন– অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান।  তিনি বেশ জনপ্রিয় এবং ইমেজসম্পন্ন মানুষ।  আইয়ুবের সাথে তার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আছে বলে জানা গেছে।  তিনি এমপি হতে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করছেন।  ৪র্থ নম্বরে যার নাম আসছে তিনি হলেন – বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র আবদুল হাই মনা। মনা নিজেই টিএস আইয়ুবকে রাজনীতিতে আনছে এমনটায় জানালেও তিনি শেষ বয়সে একবার হলেও এমপির টিকিট চাইছেন।  এছাড়া ৫ম নম্বরে যার নাম আসছে তিনি হলেন- জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ।

দলীয় সূত্রে মতে ও যশোর- ৪ আসনের একাধিক বিএনপি’র নেতাকর্মীরা জানান, প্রথমে এমপি পদে একাই আলোচনায় শীর্ষ ছিলেন বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব।  আইয়ুব দীর্ঘ ২০-৩০ বছর মাঠ চষে বেড়ালেও ৫ আগষ্টের সরকার পতনের আন্দোলনে আগে ও পরে তার ভূমিকা অনেকটা নিষ্ক্রিয়।  এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকায় লোভ লালসার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছেন।  এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির এই নেতা অর্থনৈতিক সংকটে থাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা দল পরিচালনার বাবদ ধার ও ব্যবসায়ী বাবদ ধার নিলেও এ পর্যন্ত কারো টাকা নিজ ইচ্ছায় ফেরত দেননি বলে একাধিক অভিযোগ আছে।

জানা গেছে, আইয়ুব সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবু তাহের সিদ্দিকীর কাছ থেকে এক সময় লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন যা ফেরত দেননি।  ধলগ্রাম ইউনিয়ের বিএনপির যুবদলের শিমুল খাঁন এ বিষয়টি নিচ্শিত করেছেন।  শিমুলের মামা বাড়ি উপজেলায় হওয়ার সুবাদে তিনি সেখানে ঘুরতে গিয়ে একটি চায়ের দোকানে বসে এসব তথ্য জানান। 

দলীয় সূত্রে ও বিভিন্ন তথ্য মত মতে জানা গেছে, আইয়ুব দুদকের মামলায় জেলে থাকায় এই আসনের মানুষের সুখে দুঃখে দীর্ঘদিন পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন- প্রয়াত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ভক্ত ও তার ছেলে খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা এবং তার মা সদ্য বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস বেগমের সমর্থক বিএনপি নেতা মসিয়ুর রহমান ও আবদুল হাই মনা।  এরমধ্যে মসিয়ুরকে এলাকার সাধারণ মানুষ নম্র, ভদ্র, বিনয়ী বলে জানেন।  তার নামে প্রায় ৩০ টির মতো মামলা।  তবে এক্ষেত্রে ১ম আলোচনায় থাকা আইয়ুবের নামে মামলার সংখ্যা কম বলে জানা গেছে।  মসিয়ুরের মোট ৬ বার কারাদণ্ড হয়।  জেল থেটেছেন অনেক বার। 

সূত্র জানায়, মসিয়ুরের কপাল খুলছে দীর্ঘদিন কয়েকবার জেলে থাকা ও গেল বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সরকার পতনের এক দফা দাবির কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে কাকরাইল ও বিচারপতির বাস ভবনের সামনে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মাধ্যমে এবং সর্বশেষ ৫ আগষ্টে আওয়ামী সরকার পতনের আন্দোলনে সরাসরি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় বিশেষ দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে।  এছাড়া স্বচ্ছ থাকায় তার বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে তেমন কোনো অভিযোগ নেই।  বরং ত্যাগীদের পাশে রয়েছেন বলে জানা গেছে।  তথ্য মতে, তাকে এমপি পদে প্রার্থী হওয়ার পিছনে বড় সাপোর্ট দিচ্ছেন খুলনা বিভাগের বিএনপির এক প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যরা।

সূত্র জানায়, মসিয়ুরকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসাবে চেনেন এবং বিভিন্ন সময় তার সার্বিক বিষয়ে সুনজরে রেখে নানা মাধ্যমে খোঁজ খবর রাখছেন।  যদিও তারেক রহমান এরআগে বলেছেন- দলীয় অনেক নেতারা এমপির টিকিট পাবেন না।  যদিও কেউ এমপির টিকিট পান সেক্ষেত্রে তাকে দলীয় পদ ছাড়তে হবে।

এবার আসনটিতে বিএনপির অন্যতম প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব।  ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি মাত্র ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে নৌকার কাছে হেরে যান।  ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছিলেন।  তবে সেই নির্বাচনেও পরাজিত হন। এবারও তিনি সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে জোরেশোরে প্রচারণায় রয়েছেন।  তার বিকল্প হিসাবে ভোটের মাঠে বেশ সরব মসিয়ুরসহ অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজি মতিয়ার রহমান, বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই মনা এবং যুবদল নেতা অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী। 

যুবদল নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী কয়েকবার জেল খেটেছেন কারবরণ করেছেন।  ৫ আগষ্টের হাসিনা সরকারকে বিদায়ে তার অবদাব অনেক।  এবং তিনি যুব নেতা হিসেবে এমপি প্রার্থীর পদে আলোচনায় রয়েছেন। 

এ বিষয়ে প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব গণমাধ্যমকে বলছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম।  আমার নামে ৩৪টি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে।  অন্তত আটবার কারাবরণ করেছি।  দল ত্যাগী ও নিবেদিতদের মূল্যায়ন করবে বলে আশাবাদী।  তিনি বলেন, দুঃসময়ে যাদের দেখা যায়নি, তাদের অনেকেই এখন অতিথি পাখির মতো দলের মনোনয়ন পেতে চায়। এদের বিষয়ে তৃণমূল সতর্ক আছে।  

তবে আইয়ুবের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক মামলাগুলো আলাদা ভাবে জানা যায়নি।  সূত্র মতে সত্যতা যাচাই করে দেখা গেছে, তার নামে ১১টি মামলার মধ্যে নাশকতা মামলা ৭টি ও দুদকের মামলা ৪টি।  তবে আইয়ুব মোট ৪ বার কারাবরণ করেছে।

এ বিষয়ে বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মসিয়ুর রহমান বলেছেন, আমাদের আসন নিয়ে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।  তিনি এমপি হওয়ার যোগ্যতা রাখে।  তবে রাজধানী হলো ভাগ্যের ব্যাপার।  যার ভাগ্যে এমপির টিকিট জুটবে সেই যশোর- ৪ আসনের অভিভাবক হবেন।  এক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্ত যেটাই আসবে আমরা সেটাই আমরা মেনে নিবো।

এ বিষয়ে ফারাজী মতিয়ার রহমান বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় প্রার্থী হিসাবে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলাম। আশা করি এবার দলের মনোনয়ন পাব। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মাঠে আছি। সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করছি। বিগত সরকারের আমলে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। ২৭টি মামলার আসামি হয়েছি। কয়েকবার কারাবরণ করেছি।

অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ বলেন, ঋণখেলাপি, দুর্নীতির অভিযোগ আছে- এমন কাউকে দল মনোনয়ন দেবে না বলে জানিয়েছে দল।  সেক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজের তরুণ ও ত্যাগী নেতারা মনোনয়ন পাবেন।  আমি ১৭ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম।  জেল, জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি।  এলাকার মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি।  আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসূল প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি নিয়মিত এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন করছেন। দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে আমরা কর্মসূচি পালন করতে না পারলেও অভ্যন্তরীণ কাজ করেছি।  জনগণের সঙ্গে আমাদের আছে ইনশাআল্লাহ।  আমাদের দলের পক্ষে আমি একাই আছি বাকি দলের মধ্যে অরেক প্রার্থী।  দেখা যাক আল্লাহ কি করেন।